Monday, October 23, 2017

প্রেষণা, প্রেষণা সম্পর্কিত 'ম্যাকলেল্যান্ড ও অ্যাটকিনসনের সাফল্য লাভের তত্ত্ব' এবং 'ফ্রয়েডের মনোবিশ্লেষণ তত্ত্ব'

Education, Motivation, প্রেষণা
মনোবিদগন কীভাবে প্রেষণাকে ব্যাখ্যা করেছেন? প্রেষণা সম্পর্কিত "ম্যাকলেল্যান্ড ও অ্যাটকিনসনের সাফল্যলাভের তত্ত্ব" এবং "ফ্রয়েডের মনোবিশ্লেষণ তত্ত্ব" দুটি লেখো।

প্রেষণা সম্পর্কে মনোবিদদের ব্যাখ্যা:-
(1) চাহিদা ও আচরণ:-
এই পৃথিবীতে মানুষের চাওয়া পাওয়ার শেষ নেই। একটি চাহিদাপূরণের সাথে সাথে আর একটি নতুন চাহিদার উন্মেষ ঘটে। এইসব চাহিদাপূরণের জন্য মানুষের বিভিন্ন ধরনের আচরণ করে থাকে।

(2) আচরণ ও অভাববোধ:-
মানুষের প্রত্যেকটি আচরণের পিছনে কোনো - না কোনো অভাববোধ থাকে।

(3) অভাববোধ ও অস্বস্তি:-
প্রকৃতপক্ষে মানুষ যখন কোনো কিছুর অভাব অনুভব করে, তখন তার মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তির সৃষ্টি হয়। এই অস্বস্তি দূর করার জন্যই মানুষ কাজ করে।

(4) অভাববোধ ও আকাঙ্খা:-
মানুষের প্রতিটি কাজের বা আচরণের পিছনে থাকে দুটি বিষয় - একটি হল অভাববোধ এবং অন্যটি হল লক্ষ্যপূরণের আকাঙ্খা।

(5) প্রেষণা:-
চাহিদাপূরণের চেষ্টা অর্থাৎ কাজ বা আচরণ কোনো অভাববোধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং কোনো উদ্দেশ্যসাধনের দিকে পরিচালিত হয়। মনোবিদগণ তাকে প্রেষণা বলে আখ্যা দিয়েছেন। এই প্রেষণার পিছনে যে অভাববোধ থাকে তা চেতন কিংবা অবচেতন - দুই ধরণের হতে পারে। মানুষের অনেক জৈবিক ক্রিয়াই অবচেতন অভাববোধের তাড়নায় সম্পাদিত হয়। মনোবিদ্‌দের মতে, মানুষের সব ধরণের কাজই প্রেষণা-প্রনোদিত। তবে কোনো কোনো কাজের প্রেষণা চেতন, আবার কোনো কোনো কাজের প্রেষণা অবচেতন।

প্রেষণা সম্পর্কিত ম্যাকলেল্যান্ড ও অ্যাটকিনসনের সাফল্যলাভের তত্ত্ব:-

হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড ম্যাকলেল্যান্ড এবং তাঁর সহযোগী অ্যাটকিনসন এর মতে প্রত্যেক ব্যক্তি চায় বিভিন্ন কর্মে সফলতা অর্জন করতে। শিশু অবস্থা থেকেই সফলতা লাভের আকাঙ্খা বিকশিত হতে থাকে। এই আকাঙ্খা বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হয়। তবে যেসব ব্যক্তির মধ্যে সফলতা লাভের আকাঙ্খা বেশি তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে তথা শিখনে সফলতা লাভের আকাঙ্খা বৃদ্ধি করতে হলে শিখনের প্রতিটি স্তরে উপযুক্ত লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করতে হবে। উপযুক্ত লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করার জন্য দরকার সঠিক পাঠক্রম, প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর পছন্দ ও চাহিদা মতো শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং উপযুক্ত শিক্ষণ পদ্ধতি নির্ধারণ করা ইত্যাদি।
ছাত্রছাত্রীরা যাতে বিফল হওয়ার আশঙ্কায় না ভোগে তার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকার আচরণ ও কার্যপ্রণালীর স্পষ্টতা, স্বচ্ছতা, পক্ষপাতহীনতা, সহমর্মিতা ইত্যাদিও অপরিহার্য।

ফ্রয়েডের মনোবিশ্লেষণ তত্ত্ব:-
বিশিষ্ট মনোবিদ ফ্রয়েডের মতে, ব্যক্তির মধ্যে সাধারণ জৈবিক শক্তি থেকে প্রেষণার সৃষ্টি হয়। এই সাধারণ জৈবিক শক্তি মানুষের মধ্যে দুটি ধারায় সক্রিয় হয়। একটি হল সৃজনাত্মক ধারা এবং অন্যটি হল ধ্বংসাত্মক ধারা। ফ্রয়েডের মতে সৃজনাত্মক প্রবৃত্তিটি হল প্রাণশক্তি এবং ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তিটি হল মারণশক্তি। প্রেষণা বা আচরণের উৎস হল প্রাণশক্তি ও মারণশক্তির মধ্যে ভারসাম্যের অবস্থান। ব্যক্তি প্রেষণা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ফ্রয়েড ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মূলে থাকা তিনটি বিষয়ের মিথস্ক্রিয়াকে দায়ী করেছেন। এই তিনটি বিষয় হল - (i) ইদ্‌ম (Id) (ii) অহ্‌ম (Ego) এবং (iii) অধিসত্ত্বা (Super-ego)

(i) মানুষের আদিম কামনা, বাসনা এবং প্রবৃত্তি নিয়ে ইদ্‌ম গঠিত। এগুলি প্রত্যেক মানুষের অবচেতন মনে সক্রিয় থাকে। ইদ্‌ম পুরোপুরি সুখভোগের নীতি দ্বারা পরিচালিত।

(ii) অহ্‌ম বাস্তবতা নীতি দ্বারা পরিচালিত। অহ্‌ম প্রকৃতপক্ষে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন ও যুক্তিধর্মী। অহ্‌ম সর্বদা বাস্তবের অনুশাসন মেনে চলে। এটি ইদ্‌মের সকল দাবী পূরণ করে না।

(iii) অধিসত্ত্বা অহ্‌মের মধ্যে নীতিবোধ জাগ্রত করে ইদ্‌মের অসামাজিক আচরণগুলিকে প্রতিহত করে। মানুষের বিবেকের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করে অধিসত্ত্বা। এটি মানুষের ভিত্তিস্বরূপ। ফ্রয়েড মনে করেন যে, ব্যক্তির প্রেষণা নিয়ন্ত্রিত হয় এই ইদ্‌ম, অহ্‌ম এবং অধিসত্ত্বার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে।


No comments:

Post a Comment