ত্বরণের ধারণা (Concept of Acceleration):
কোনো বস্তু যদি অসম বেগ নিয়ে, অর্থাৎ সময়ের সাথে সাথে যদি তার বেগের মান পরিবর্বাতিত হয় অর্থাৎ বাড়ে বা কমে অথবা বেগের মান একই থাকলেও যদি অভিমুখ পরিবর্তিত হয় বা বেগের মান ও অভিমুখ দুটিই পরিবর্তিত হয়, তখন ওই বস্তুর বেগ অসম হয়। বেগের এই অসমতার মাত্রা অর্থাৎ একক সময়ে কতটা বেগের পরিবর্তন হল, অর্থাৎ একক সময়ে বেগ কতটা বাড়লো বা কমলো তা পরিমাপের জন্য অপর একটি ভৌত রাশির ধারণা আনতে হয়। একে ত্বরণ বা মন্দন বলে।
যদি সময়ের সাথে সাথে বেগের মান বাড়তে থাকে, তখন আমরা বলি বস্তুটিতে ত্বরণ আছে, আবার সময়ের সাথে সাথে বেগের মান যদি কমতে থাকে তখন আমরা বলি বস্তুটিতে মন্দন আছে। এই ত্বরণ ও মন্দন দুটির একই অর্থ, একটি বেগ বাড়ার সময় ব্যবহার করা হয় ও মন্দন বেগ কমার সময় ব্যবহার করা হয়।
ত্বরণ (Acceleration):
সময়ের সাথে সাথে কোনো বস্তুর বেগ যদি বাড়তে থাকে, তাহলে বস্তুটির বেগ বৃদ্ধির হারকে অর্থাৎ একক সময়ে যে পরিমাণ বেগের বৃদ্ধি ঘটে, তাকে ওই বস্তুর ত্বরণ বলে।
যেহেতু বেগের মান ও অভিমুখ দুইই আছে, তাই ত্বরণেরও মান ও অভিমুখ দুইই আছে।
ধরাযাক, \({t_1}\) সময়ে একটি বস্তুর বেগ \(u\) এবং \({t_2}\) সময়ে ওই বস্তুর বেগ বেড়ে হয় \(v\)। এখানে \(v > u\)।
এখানে বেগের পরিবর্তন = অন্তিম বেগ - প্রাথমিক বেগ
বা, \(\Delta v = v - u\)
সময়কাল = \(\Delta t = \left( {{t_2} - {t_1}} \right) = t\) (ধরি)
অর্থাৎ \(\Delta t\) সময়কালে বস্তুটির মধ্যে বেগের পরিবর্তন হয় \(\Delta v\)
এখন ত্বরণের সংজ্ঞায় পাই, বেগ বৃদ্ধির হারকে ত্বরণ বলে, তাই
ত্বরণ (Acceleration) \( = a = \frac{{\Delta v}}{{\Delta t}} = \frac{{v - u}}{{{t_2} - {t_1}}} = \frac{{v - u}}{t}\)
মন্দন (Retardation):
সময়ের সাথে সাথে যদি কোনো বস্তুর বেগ কমতে থাকে, তাহলে বস্তুটির বেগ হ্রাসের হারকে অর্থাৎ একক সময়ে যে পরিমাণ বেগের হ্রাস ঘটে, তাকে ওই বস্তুর মন্দন বলে।
যেহেতু বেগের মান ও অভিমুখ দুইই আছে, তাই মন্দনের মান ও অভিমুখ দুইই আছে।
ধরাযাক, \({t_1}\) সময়ে একটি বস্তুর বেগ \(u\) এবং \({t_2}\) সময়ে ওই বস্তুর বেগ বেড়ে হয় \(v\)।
এখানে \(v < u\)। এখানে বেগের পরিবর্তন = অন্তিম বেগ - প্রাথমিক বেগ বা, \(\Delta v = u - v\) সময়কাল = \(\Delta t = \left( {{t_2} - {t_1}} \right) = t\) (ধরি) অর্থাৎ \(\Delta t\) সময়কালে বস্তুটির মধ্যে বেগের পরিবর্তন হয় \(\Delta v\) এখন মন্দনের সংজ্ঞায় পাই, বেগ হ্রাসের হারকে মন্দন বলে, তাই মন্দন (Retardation) \( = a = \frac{{\Delta v}}{{\Delta t}} = \frac{{v - u}}{{{t_2} - {t_1}}} = \frac{{v - u}}{t}\) মন্দনকে ঋনাত্বক ত্বরণ বলার কারণ:
ধরাযাক, কোনো বস্তুর প্রাথমিক বেগ \(u\) এবং
\(t\) সময় পরে বস্তুটির অন্তিম বেগ হয় \(v\)।
এখন \(v > u\) হলে অর্থাৎ বেগের বৃদ্ধি ঘটলে ত্বরণের সংজ্ঞা থেকে পাই, বেগ বৃদ্ধির হারকে ত্বরণ বলে।
এখানে \(t\) সময়ে বেগের পরিবর্তন হয় \(\Delta v = \left( {v - u} \right)\)।
সুতরাং বস্তুটির ত্বরণ \( = a = \frac{{\left( {v - u} \right)}}{t}\)
আবার \(u > v\) হলে অর্থাৎ বেগের হ্রাস ঘটলে মন্দনের সংজ্ঞা থেকে পাই, বেগ হ্রাসের হারকে মন্দন বলে।
এখানে \(t\) সময়ে বেগের পরিবর্তন হয় \(\Delta v = \left( {u - v} \right)\)।
সুতরাং বস্তুটির মন্দন \( = a = \frac{{\left( {u - v} \right)}}{t}\)
এখন বস্তুটির ত্বরণ \( = \frac{{\left( {v - u} \right)}}{t} = - \frac{{\left( {u - v} \right)}}{t} = - \) মন্দন।
তাই মন্দনকে বস্তুর ঋনাত্বক ত্বরণ বলে।
কোনো বস্তুর গতিবেগ আছে, কিন্তু ত্বরণ নেই - এমন হতে পারে কি?
কোনো বস্তু সমবেগে সরলরেখা বরাবর চলতে থাকলে, ওই অবস্থায় বস্তুটির বেগের মান ও অভিমুখ কোনোটিই পরিবর্তিত হয় না। এই অবস্থায় বস্তুটির বেগ থাকলেও তার ত্বরণ বা মন্দন থাকে না।
কোনো বস্তুর গতিবেগ না থাকলেও তার ত্বরণ কি থাকতে পারে?
কোনো বস্তুর গতিবেগ না থাকলেও তার ত্বরণ থাকতে পারে।
(1) যখন কোনো বস্তুকে উপরের দিকে ছোঁড়া হয়, অভিকর্ষের টানে বস্তুটির বেগ ক্রমশ কমতে থাকে, এবং একটি সর্বোচ্চ উচ্চতায় বস্তুটির বেগ শূন্য হয়ে যায়। তবুও এই সময় বস্তুটির উপর অভিকর্ষজ ত্বরণ কাজ করে। এই অভিকর্ষজ ত্বরণের জন্যেই বস্তুটি আবার নীচের দিকে নামতে থাকে।
অর্থাৎ, উপরের দিকে ছোঁড়া কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ উচ্চতায় বস্তুটির বেগ শূন্য হলেও তার ত্বরণ থাকে। এই ত্বরণের মান পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের মানের সমান হয়।
(2) কোনো সরল দোলকের গতির ক্ষেত্রে, দোলক পিন্ডের সর্বোচ্চ অবস্থানে তার বেগের মান শূন্য হলেও তার ত্বরণ থাকে, যার প্রভাবে দোলক পিন্ডটি পুনরায় দোলন শুরু করে।
বলের ধারণা (Concept of Force):
কোনো বস্তুর উপর বাইরে থেকে যা প্রয়োগ করে, স্থির বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয় কোনো বস্তুর আকার (Size) বা আকৃতির (Shape) পরিবর্তন করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয়, তাকে বল বলে।
সাধারণভাবে, কোনো বস্তুর উপর টান দেওয়া বা ঠেলা দেওয়াকে আমরা বল বলি। এই বলকে দেখা যায় না। কিন্তু এই বল কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত হলে, বল প্রয়োগের ফলাফলগুলি লক্ষ্য করা যায়। এই বল প্রয়োগের ফলে নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি দেখতে পাওয়া যায়:-
(i) কোনো স্থির বস্তুকে গতিশীল করা যায়।
(ii) কোনো গতিশীল বস্তুকে স্থির করা যায়।
(iii) কোনো গতিশীল বস্তুর গতির মান পরিবর্তন করা যায়।
(iv) বল প্রয়োগের ফলে কোনো গতিশীল বস্তুর গতির অভিমুখ পরিবর্তন করা যায়
(v) বল প্রয়োগের ফলে কোনো বস্তুর আকার ও আকৃতির পরিবর্তন করা যায়।
কোনো বস্তুর ওপর বল প্রযুক্ত হলে তার প্রভাব গুলি উল্লেখ করো:
(1) বল প্রয়োগে কোনো স্থির বস্তুকে গতিশীল করা যায়। যেমন:
মাটিতে রাখা একটু ফুটবলকে লাথি মারলে তা গড়াতে শুরু করে। আবার একটি স্থির দেওয়ালে বল প্রয়োগ করে দেওয়ালটি গতিশীল করার চেষ্টা করা হলেও, দেওয়ালটিকে নড়ানো যায় না। তাই বলা যায়, বল প্রয়োগ করে কোনো স্থির বস্তুকে গতিশীল করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয়।
(2) বল প্রয়োগে কোনো গতিশীল বস্তুকে স্থির করা যেতে পারে। যেমন
একজন ক্রিকেট খেলোয়াড় যখন ক্যাচ নেয়, তখন গতিশীল বলটিকে খেলোয়াড়টির হাত দ্বারা বল প্রয়োগ করে থামাতে পারে।
(3) বল প্রয়োগে কোনো গতিশীল বস্তুর গতির অভিমুখ পরিবর্তন করা যায়। যেমন,
ক্রিকেট খেলায় বোলারের ছোঁড়া বলকে ব্যাটসম্যান তার ব্যাটের দ্বারা বল প্রয়োগ করে বলের গতির অভিমুখ পরিবর্তন করে।
(4) বল প্রয়োগে বস্তুর আকার ও আকৃতির পরিবর্তন ঘটাতে পারে। যেমন,
একটি রবারের বলকে মেঝের উপর রেখে, বলটির উপর হাত দিয়ে বলটিকে চাপ দেওয়া হলে, বলটির আকৃতির পরিবর্তন হবে। আবার একটি স্প্রীংএর দুইপ্রান্ত বল প্রয়োগ করে স্প্রীংটির দৈর্ঘ্য বাড়ানো বা কমানো যায়, অর্থাৎ আকার ও আকৃতির পরিবর্তন ঘটানো যায়।
প্রতিমিত বল (Balanced Force):
যদি কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত সমস্ত বলগুলির মানে ও দিকে তাদের যোগফল বা লব্ধি বল যদি শূন্য হয় তখন বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলকে প্রতিমিত বল বলে।
এই প্রতিমিত বল বস্তুর স্থির অবস্থা বা গতির অবস্থার বা গতির অভিমুখ কোনোটারই পরিবর্তন করতে পারে না অর্থাৎ স্থির অবস্থায় থাকা বস্তুর উপর প্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে বস্তুটি স্থিরই থাকবে আবার সরলরেখায় গতিশীল বস্তুর উপর প্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে তার গতিও একইরকম বজায় থাকবে, কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। মনে হবে বস্তুটির উপর কোনো বলই প্রযুক্ত হচ্ছে না
যেমন,
(1) একটি ভারী বাক্সকে একটি অমসৃণ তলের উপর উপর রেখে ঠেলার চেষ্টা করা হলে বাক্সটির উপর সামনের দিকে প্রযুক্ত বল ও বাক্স ও অমসৃণ তলের সংস্পর্শতলের মধ্যে ক্রিয়াশীল ঘর্ষণ বল দ্বারা প্রতিমিত হয় এক্ষেত্রে দুটি বলের ক্রিয়ার সৃষ্ট প্রতিমিত বলের জন্য বাক্সটিকে নড়ানো যায় না।
(2) দড়ি টানাটানি খেলায় দুটি দল একটি দড়িকে বিপরীত দিক থেকে সমান কিন্তু বিপরীতমুখী বলে টানলে দড়িটি কোনো পক্ষের দিকেই অগ্রসর হয় না বরং নিজের অবস্থানেই স্থির থাকে। এক্ষেত্রে উভয়দল দ্বারা প্রযুক্ত সমান ও বিপরীতমুখী বল দুটির ক্রিয়ায় প্রতিমিত বলের সৃষ্টি হয়।
(3) দুইজন ব্যক্তি একটি টেবিলের দুইপাশে দাঁড়িয়ে বিপরীত দিকে একই পরিমাণ বল প্রয়োগ করে ঠেলার চেষ্টা করা হলে টেবিলটি কোনো দিকেই নড়বে না কারন এক্ষেত্রে দুটি সমান ও বিপরীতমুখী বলের ক্রিয়ায় টেবিলটিতে প্রযুক্ত বল প্রতিমিত হয়ে যায়।
(4) একটি ব্লককে মেঝের উপর স্থির অবস্থায় রেখে ব্লকটির উপর দুটি সমমানের বল একই রেখা বরাবর বিপরীত দিকে একই সঙ্গে প্রযুক্ত করা হলে ব্লকটির মধ্যে কোনো গতির সৃষ্টি হবে না কারণ এক্ষেত্রে ব্লকটির উপর ক্রিয়াশীল দুটি সমমানের ও বিপরীত বলের ক্রিয়ায় একটি প্রতিমিত বল সংস্থা সৃষ্টি করে।
(5) এক ব্যক্তি একটি ভর্তি ব্যাগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক্ষেত্রে ব্যাগের ওজন উল্লম্বভাবে নীচের দিকে ক্রিয়াশীল আবার ব্যক্তি ব্যাগের ওপরব্যাগের ওজনের সমান ও বিপরীতমুখী একটি বল প্রয়োগ করছে এখানে ব্যাগের ওপর ক্রিয়াশীল বলগুলির লব্ধি শূন্য তাই ব্যাগের এখানে ওজন ও ব্যক্তি দ্বারা প্রযুক্ত বল একত্রে প্রতিমিত বল সংস্থা গঠন করে।
অপ্রতিমিত বল বা কার্যকর বল (Unbalanced Force):
যদি কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত সমস্ত বলগুলির মানে ও দিকে তাদের যোগফল বা লব্ধি বল যদি শূন্য না হয়, তখন বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলকে অপ্রতিমিত বল বা কার্যকর বল বলে।
এই অপ্রতিমিত বল বস্তুর স্থির অবস্থা বা গতির অবস্থার বা গতির অভিমুখ পরিবর্তন করতে পারে অর্থাৎ স্থির অবস্থায় থাকা বস্তুর উপর অপ্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে বস্তুটি গতিশীল হতে পারে, আবার কোনো গতিশীল বস্তুর উপর অপ্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে বস্তুটিকে স্থির করা যেতে পারে আবার বস্তুটির গতির অভিমুখ পরিবর্তন করা যেতে পারে বা তার গতিশীলতাও পরিবর্তন করা যেতে পারে।
যেমন,
(1) একটি ভারী বাক্সকে একটি অমসৃণ তলের উপর রেখে একটি বৃহৎ মানের বল দ্বারা টানা হলে বাক্সটি প্রযুক্ত বলের অভিমুখেই গতিশীল হয়, এক্ষেত্রে বাহ্যিক বল, বাক্স ও সংস্পর্শতলের মধ্যে ক্রিয়াশীল ঘর্ষণ বল অপেক্ষা বেশী হয়, তাই বস্তুটির উপর অপ্রতিমিত কাজ করে এবং এই অপ্রতিমিত বল প্রযুক্ত বলের অভিমুখেই হয় তাই বস্তুটি গতিশীল হতে শুরু করে।
(2) একটি টেবিলকে দুই বন্ধু মিলে একই দিকে \({F_1}\) ও \({F_2}\) মানের বল প্রযুক্ত করছে।
এক্ষেত্রে টেবিলটির ওপর প্রযুক্ত লব্ধি বল বা কার্যকর বল হল \(\left( {\overrightarrow {{F_1}} + \overrightarrow {{F_2}} } \right)\)।
তাই এখানে টেবিলটি তাদের বল প্রয়োগের অভিমুখ বরাবর গতিশীল হবে।
(3) আবার একটি টেবিলকে দুই বন্ধু মিলে বিপরীতদিকে দিকে \({F_1}\) ও \({F_2}\) মানের বল প্রয়োগ করছে।
এক্ষেত্রে \({F_1} > {F_2}\) হলে, টেবিলটির ওপর লব্ধি বা কার্যকর বল হয় \(\left( {\overrightarrow {{F_1}} - \overrightarrow {{F_2}} } \right)\)।
এক্ষেত্রে টেবিলটি \({F_1}\) বলের অভিমুখে গতিশীল হবেL
(4) আবার একটি টেবিলকে দুই বন্ধু মিলে বিপরীতদিকে দিকে \({F_1}\) ও \({F_2}\) মানের বল প্রয়োগ করছে।
এক্ষেত্রে টেবিলটির ওপর লব্ধি বা কার্যকর বল হয় \(\left( {\overrightarrow {{F_2}} - \overrightarrow {{F_1}} } \right)\)।
এক্ষেত্রে টেবিলটি \({F_2}\) বলের অভিমুখে গতিশীল হবে।
কোনো বস্তুর ওপর কার্যকর বল বা অপ্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে – কি কি হতে পারে?
কোনো বস্তুর ওপর অপ্রতিমিত বা কার্যকর বল বা লব্ধি বল প্রযুক্ত হলে, বস্তুটিতে ত্বরণ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ বস্তুটিতে গতির অর্থাৎ স্থির বা গতিশীল অবস্থায় মুলত বেগের পরিবর্তন ঘটবে। যেমন,
(1) স্থির বস্তু গতিশীল হতে পারে।
(2) গতিশীল বস্তু স্থির হতে পারে
(3) কোনো গতিশীল বস্তুর গতির মান পরিবর্তিত হতে পারে।
(4) গতিশীল বস্তুর গতির অভিমুখ পরিবর্তিত হতে পারে।
(5) গতিশীল বস্তুর বেগের মান ও অভিমুখ দুইই পরিবর্তিত হতে পারে।
(6) কোনো বস্তুর আকার ও আকৃতির পরিবর্তন ঘটতে পারে।
কোনো বস্তুর উপর প্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে বস্তুটির গতির পরিবর্তন হয় না, কিন্তু আকার ও আকৃতির পরিবর্তন হতে পারে - উদাহরণ দাও।
একটি স্প্রীং নিয়ে তাকে দুহাতে সমান পরিমান পরিমান ও বিপতীতমুখী বল প্রয়োগ করলে দেখা যায় স্প্রীং টি সংকুচিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে স্প্রীংটির উপর তার দুইপ্রান্তে সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করায় - স্প্রীংটির ওপর ক্রিয়াশীল লব্ধি বল অপ্রতিমিত বলের মান শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু তবুও স্প্রীংটির মধ্যে দৈর্ঘ্য বরাবর বিকৃতি দেখা যায়।
বাহ্যিক বল (External Force):
কোনো বস্তুর উপর বল প্রযুক্ত হওয়ার সময় যদি বলের প্রয়োগকারী এবং বস্তু আলাদা সংস্থা হয়, সেক্ষেত্রে ওই বল বস্তুর গতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়, অর্থাৎ বস্তুটিতে ত্বরণের সৃষ্টি হয়। এই বলকে বাহ্যিক বল বলে।
এক্ষেত্রে রিকশাচালক, বাইরে অর্থাৎ মাটিতে পা রেখে রিকশাটিকে ঠেললে রিকশাটির অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। আবার চেয়ারে না বসে, মাটিতে পা রেখে চেয়ারটিকে হাত দিয়ে ঠেললে চেয়ারটির অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। অর্থাৎ কোনো বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে গেলে অবশ্যই বস্তুটিতে বাহ্যিক ও অপ্রতিমিত বল প্রযুক্ত হওয়া একান্ত জরুরী।
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র (First Law of Newton):
বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল দ্বারা বস্তুর অবস্থার পরিবর্তনে বাধ্য না করলে, স্থির বস্তু চিরকাল স্থির অবস্থাতেই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখা বরাবর চলতে থাকবে।
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে জানা যায়:
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে দুটি বিষয় জানা যায়।
(1) পদার্থের একটি মৌলিক ধর্ম - জাড্যের ধারণা।
(2) বলের সংজ্ঞা বা ধারণা
(1) পদার্থের একটি মৌলিক ধর্ম - জাড্য (Inertia):
নিউটনের প্রথম গতিসূত্রে বলা হয়েছে যে - কোনো জড় বস্তু যদি স্থির অবস্থায় থাকে, তাহলে বাইরে থেকে তার ওপর বল প্রয়োগ না করলে, ওই বস্তুটি নিজে ওর স্থির অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে না। অর্থাৎ স্থির বস্তুর ধর্মই হল চিরকাল স্থির অবস্থায় থাকা।
আবার কোনো বস্তু যদি গতিশীল অবস্থায় থাকে, তাহলে বাইরে থেকে ওর ওপর বল প্রযুক্ত না করলে বস্তুটি নিজে থেকে তার গতিশীলতা অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। অর্থাৎ গতিশীল বস্তুর ধর্মই হল চিরকাল সমবেগে সরলরেখা বরাবর চলা।
তাই কোনো বস্তুর যে ধর্মের জন্য তার স্থির বা গতিশীল অবস্থার প্রবণতা দেখাও অর্থাৎ স্থির বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টাকে বাধা দেয়, সেই ধর্মকেই ওই বস্তুর জাড্য বলে। এই কারনে নিউটনের প্রথম গতিসূত্রটিকে জাড্যের সূত্রও বলা হয়।
কোনো বস্তুর জাড্য ধর্ম আলোচনা করতে গিয়ে দেখি, কোনো বস্তুর ভর যত বেশী হয়, তার জাড্য ধর্মও োো বেশী প্রকাশ পায়। যেমন কোনো হালকা বস্তুর তুলনায় ভারী বস্তুকে স্থির অবস্থা থেকে গতিশীল অবস্থায় আনতে বা গতিশীল অবস্থা থেকে স্থির অবস্থায় আনতে অনেক বেশী বল প্রয়োগ করতে হয়। তাই কোনো বস্তুর ভর যত বেশী হবে, তার জাড্য ধর্মও তত বেশী হবে। তাই, বলা যায় কোনো জড় বস্তুর ভরই হল জাড্যের পরিমাপ।
যে ধর্মের জন্য কোনো স্থির বস্তু চিরকাল স্থির অবস্থায় এবং গতিশীল বস্তু সর্বদা সমবেগে গতিশীল অবস্থায় থাকতে চায়। বস্তুর এই ধর্মকে জাড্য বা জড়তা (Inertia) বলে।
পদার্থের এই জাড্য ধর্ম আবার দুইরকমের:
(1) স্থিতিজাড্য (Inertia of Rest):
অচল বা স্থির অবস্থায় থাকা জড় বস্তুর চিরকাল স্থির অবস্থায় থাকার প্রবণতাকে স্থিতিজাড্য বলে।
নীম্নে স্থিতিজাড্যের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল:
(i) কোনো স্থির গাড়ী হঠাৎ চলতে শুরু করলে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়ে। কারণ গাড়ীটি যখন স্থির ছিল, তখন যাত্রীর সমগ্র দেহও স্থির ছিল। এখন হঠাৎ করে গাড়ীটি চলতে শুরু করলে যাত্রীর নীচের অংশ (পা) গাড়ীর সঙ্গে সংলগ্ন থাকায় তা গতিশীল হয়, কিন্তু যাত্রীর দেহের উপরের অংশ স্থিতিজাড্য ধর্মের জন্য স্থির থাকতে চায়। তাই যাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়ে।
(ii) একটি গ্লাসের উপর একটি কার্ড রাখা হল। ওই কার্ডের উপর একটি কয়েন রেখে কার্ডটিকে খুব জোরে টোকা দিলে কার্ডটি সরে যায়। কিন্তু কয়েনটি স্থিতিজাড্য ধর্মের জন্য আগের অবস্থানেই স্থির থাকতে চায়। ফলে কার্ডটি সরে গেলেও কয়েনটি গ্লাসের মধ্যে পড়ে যায়।
(iii) চা ভর্তি একটি কাপকে হঠাৎ করে সামনের দিকে টানা হলে, কিছু পরিমান চা পিছনের দিকে ছিটকে পড়ে। কারণ, কাপটিকে সামনের দিকে টানলে কাপ ও কাপের নীচের অংশের চা গতিশীল হয়। কিন্তু কাপের উপরের অংশের চা স্থিতিজাড্য ধর্মের জন্য তখনও স্থির অবস্থায় থাকতে চায়। ফলে কিছু পরিমাণ চা পিছনের দিকে ছিটকে পড়ে।
(iv) ভারী কোট বা কম্বলের উপর যে ময়লা বা ধূলিকণা জমে, তা সূতোর ফাঁকে ফাঁকে আলগাভাবে আটকে থাকে। এই সব জমে থাকা ময়লা ঝেড়ে থেলতে কোটটিকে ছড়ি দিয়ে বারবার আঘাত করা হয়। কোটের ওপর ছড়ি দিয়ে আঘাত করলে কোটটি সরে যায় (গতিশীল হয়), কিন্তু ময়লা, ধূলিকণা ও অন্যান্য কণা তার স্থিতিজাড্য ধর্মের জন্য একই স্থানে থাকতে চায়। ফলে ধূলিকণা ও অন্যান্য ময়লা কোনো অবলম্বন না পেয়ে কোট থেকে পৃথক হয়ে নীচে পড়ে যায়।
(2) গতিজাড্য (Inertia of Motion):
কোনো গতিশীল বস্তুর সমগতিতে সরলরেখা বরাবর গতিশীল অবস্থা বজায় রাখার প্রবণতাকে গতিজাড্য বলে।
যেমন,
(i) কোনো চলন্ত গাড়ী হঠাৎ করে থেমে গেলে যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কারণ গাড়ীটি যখন গতিশীল ছিল, গাড়ীর সঙ্গে সংলগ্ন যাত্রীর দেহও গতিশীল ছিল। এখন গাড়ীটি হঠাৎ থেমে গেলে, গাড়ীর সঙ্গে সংলগ্ন ব্যাক্তির নীড়ের অংশ (পা) স্থির হয়ে যায়, কিন্তু যাত্রীর উপরের অংশ গতিজাড্য ধর্মের জন্য (মাথা) তখনো গতিশীল অবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা করে। তাই যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
(ii) একটি ঘূর্ণায়মান বৈদ্যুতিক পাখার সুইচ অফ করে দিলেও পাখাটি বেশ কিছুক্ষণ ঘুরতে থাকে। কারণ সুইচ অন থাকা অবস্থায় পাখাটি ঘূর্ণায়মান ছিল। এখন সুইচ অফ করলে, পাখাটি তার গতিজাড্য ধর্ম বজায় রাখতে চেষ্টা করে। তাই সুইচ অফ করলেও পাখাটি আরও বেশ কিছুক্ষন ঘোরে স্থির হয়।
(iii) কোনো অ্যাথলিট, লংজাম্প দেওয়ার সময় দূর থেকে কিছুটা দৌড়ে আসে। কারণ দূর থেকে কিছুটা দৌড়ে আসলে ওই অ্যাথলিটের মধ্যে একটি গতিজাড্য ধর্মের সৃষ্টি হয় যার প্রভাবে সে, সাধারণের তুলনায় সীমা নির্দেশক ট্র্যাক থেকে অনেকটা বেশি লাফাতে পারে।
(iv) সমবেগে চলন্ত কোনো গাড়ীর মধ্যে কোনো ব্যক্তি যদি একটি বলকে সোজা উপরের দিকে ছুঁড়ে তাহলে কিছুক্ষণ পর বলটি আবার তার হাতেই এসে পড়ে, যদিও এই সময়ের মধ্যে গাড়ীটি সামনের দিকে কিছুটা এগিয়ে যায়। কারণ, বলটিকে উপরের দিকে ছোঁড়া হলে, গতিজাড্য ধর্মের জন্য বলটিও তার গতিবেগ বজায় রাখে, ফলে একই সময়ে বল ও যাত্রী একই পথ অতিক্রম করে, তাই বলটি আবার ব্যক্তির হাতেই এসে পড়ে।
(v) কোনো চলন্ত ট্রামগাড়ী থেকে আমরা যখন নামি, তখন পেছন দিকে হেলে নামি। কারণ চলন্ত গাড়ীতে থাকার সময় আমাদের দেহ ট্রামের সঙ্গেই গতিশীল থাকে। গাড়ী থেকে মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পা মাটিতে স্পর্শ করে এবং পা স্থির হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেহের উপরের অংশ গতি-জাড্য ধর্মের জন্য তখনও গতিশীল অবস্থায় থাকতে চায় এবং দেহের উপরের অংশ সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
এখন পেছনের দিকে হেলে না নামলে আমরা সামনের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়তে পারি। এটা আটকানোর জন্য পেছন দিকে হেলে নামতে হয়। এর ফলে দেহের উপরের অংশ কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে স্থির হয়ে যায়।, ফলে সামনের দিকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ভরবেগের ধারণা (Concept of Momentum):
কোনো গতিশীল বস্তুর ভর ও তার গতিবেগের সমন্বয়ে ওই বস্তুর মধ্যে যে গতীয় ধর্মের সৃষ্টি হয় তাকে ভরবেগ বলে। কোনো বস্তুর ভর \(m\) এবং তার গতিবেগ \(v\) হলে, ওই বস্তুর ভর ও বেগের গুনফল দ্বারা তার ভরবেগের পরিমাপ করা হয়।
অর্থাৎ ভরবেগ (Momentum) =ভর \( \times \) বেগ = \(m \times v\)
বল প্রয়োগের দ্বারা কোনো বস্তুর গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যায়। ধরাযাক দুটি আলাদা ভরের বস্তু স্থির অবস্থায় আছে। এখন ওই দুটি বস্তুর ওপর একই পরিমাণ বল প্রয়োগ করে বস্তু দুটিতে সম পরিমাণ বেগ উৎপন্ন করা যায় না। এক্ষেত্রে বস্তু দুটিতে সম পরিমাণ বেগ উৎপন্ন করতে হলে হালকা বস্তুটিতে কম বল প্রয়োগ করতে হবে এবং অপেক্ষাকৃত ভারী বস্তুটিতে বেশী বল প্রয়োগ করতে হবে। তাই এক্ষেত্রে বলা যায়, কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে বস্তুর বেগের যে পরিবর্তন ঘটে, তা বস্তুটির ভরের উপর নির্ভরশীল। কোনো গতিশীল বস্তুর ভর ও বেগের সমন্বয়ে ওই বস্তুর মধ্যে এক ধরণের গতীয় ধর্মের উদ্ভব হয়, যাকে আমরা প্রকাশ করার জন্য ভরবেগের ধারণা নিয়ে আসি।
কোনো গতিশীল বস্তুর ভরবেগ ভালোভাবে বুঝতে হলে নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি বোঝার চেষ্টা করি।
(1) ধরাযাক, একটি প্লাস্টিকের তৈরি হালকা রোলার তোমার চলার গতিপথে একটি নির্দিষ্ট মানের বেগ নিয়ে ধেয়ে আসছে। এই অবস্থায়, আমরা সহজেই ওই হালকা রোলারটিকে হাত দিয়ে বল প্রয়োগ করে থামাতে পারি। কিন্তু ধরাযাক, হুবহু একইরকমের একটি নিরেট লোহার তৈরি রোলার, ওই একই নির্দিষ্ট মানের বেগ নিয়ে এগিয়ে আসছে। এই অবস্থায় তোমার পক্ষে কি সম্ভব? যে – ওই লোহার তৈরি রোলারটিকে হাতের মাধ্যমে আটকে স্থির অবস্থায় আনা?
উত্তরটা নিশ্চই না। কারণ নিরেট লোহার রোলারটিতে তার অতিরিক্ত পরিমাণ ভর ও বেগের সমন্বয়ে একটি গতিশীল ধর্মের উদ্ভব হয় যা আমরা এক্ষেত্রে ভরবেগ বলি। এক্ষেত্রে হালকা প্লাস্টিকের রোলারটির ভরবেগ খুব কম হওয়ায় আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় শুধুমাত্র হাত দিয়ে আটকে দেওয়া। কিন্তু নিরেট লোহার রোলারটির ভরবেগ অনেক বেশী হওয়ায়, তাকে স্থির অবস্থায় আনতে অনেক বেশী পরিমান বল প্রয়োগের প্রয়োজন। তাও এটিকে আমরা শুধুমাত্র হাতের দ্বারা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে থামাতে পারিনা।
(2) যেমন, একটি খালি ট্রাক ও একটি মালবোঝাই ভারী ট্রাক যদি একই বেগ নিয়ে চলে তবুও, ভারী ট্রাকটির ভরবেগ বেশী হওয়ায়, তাকে থামাতে বেশী পরিমান বল প্রয়োগ করতে হবে, খালি ট্রাকের তুলনায়। আমার একই ভরের দুটি ট্রাকের মধ্যে একটি বেগ বেশী এবং অন্যটির বেগ কম। তখনো যার ভরবেগ বেশী তার গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে বেশী বল প্রয়োগ করতে হবে এবং যার ভরবেগ কম তার একই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে কম বল প্রয়োগ করলেই হবে।
(3) যে বস্তুর ভরবেগ বেশী, তার গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে বেশী পরিমান বল প্রয়োগ করতে হবে এবং যে বস্তুর ভরবেগ কম, তার গতিশীল অবস্থার একই পরিমাণ পরিবর্তন ঘটাতে কম বল প্রয়োগ করতে হবে।
একটি মালবাহী ট্রাক ও একটি খালি ট্রাক একই বেগ নিয়ে চলছে। ট্রাক দুটির গঠনও হুবহু একই। কোনটিকে থামাতে বেশী পরিমাণ বল প্রয়োগ করতে হবে?
এখানে ট্রাকদুটির গঠন হুবহু এক হলেও মালভর্তি ট্রাকটির ভর বেশী। কিন্তু উভয়ের বেগ একই হওয়ায়, মালবাহী ট্রাকটির ভরবেগ বেশী। এখন ট্রাকদুটিকে থামাতে অর্থাৎ স্থির অবস্থায় আনতে হলে, অর্থাৎ একই পরিমাণ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে, মালবাহী ট্রাকটিতে বেশী বল প্রয়োগ করতে হবে। কারণ মালবাহী ট্রাকটির ভরবেগ বেশী। নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রে এটাই বলা হয় যে, কোনো বস্তুর ভরবেগ পরিবর্তনের হার বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক। এখানে মালবাহী ট্রাকটির ভরবেগের পরিবর্তনের হার, খালি ট্রাকটির ভরবেগের পরিবর্তনের হারের থেকে বেশী। তাই মালবাহী ট্রাকে বেশী বল প্রয়োগ করতে হবে।
ভরবেগের CGS ও SI পদ্ধতিতে একক:
ভরবেগের CGS একক:
ভরবেগ = ভর\( \times \)বেগ = \(m \times v\)
তাই CGS পদ্ধতিতে ভরবেগের একক = ভরের একক \(m \times v\) বেগের একক
= ভর \( \times \) বেগ
= গ্রাম \( \times \) সেমি/সেকেন্ড
= গ্রাম.সেমি/সেকেন্ড
= \(gm.cm/s\)
= \(gm.cm.{s^{ - 1}}\)
ভরবেগের SI একক:
ভরবেগ = ভর\( \times \)বেগ = \(m \times v\)
তাই CGS পদ্ধতিতে ভরবেগের একক = ভরের একক \(m \times v\) বেগের একক
= ভর \( \times \) বেগ
= কিগ্রা \( \times \) মিটার/সেকেন্ড
= কিগ্রা.মি/সেকেন্ড
= \(kg.m/s\)
= \(kg.m.{s^{ - 1}}\)
নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র (Second Law of Motion):
কোনো বস্তুর ভরবেগ পরিবর্তনের হার, বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক। প্রযুক্ত বল যেদিকে ক্রিয়া করে, ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই হয়।
নিউটনের এই দ্বিতীয় গতিসূত্র থেকে কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের পরিমাপ নির্ণয় করা যায়।
\(m\) ভরের কোনো বস্তুতে a ত্বরণ সৃষ্টি করতে প্রয়োজনীয় বলের মান হয়:
\(F = m \times a = ma\)
অর্থাৎ বল=ভর\( \times \)ত্বরণ = \(F = m \times a = ma\)
CGS ও SI পদ্ধতিতে বলের পরম একক:
বলের CGS একক:
বল = বস্তুর ভর\( \times \)ত্বরণ = \(m \times a = ma\)
তাই বলের একক = বস্তুর ভরের একক\( \times \)ত্বরণের একক
= গ্রাম\( \times \) \(সেমি/{সেকেন্ড^2}\)
= \(gm.cm/{s^2}\)
= \(gm.cm.{s^{ - 2}}\)
= \(dyne\)
\(1\) \(dyne\) বলের সংজ্ঞা:
\(1gm\) ভরের কোনো বস্তুর ওপর যে পরিমাণ বল প্রযুক্ত হলে, ওই বস্তুতে ঠিক \(1cm/{s^2}\) ত্বরণ সৃষ্টি হয়, সেই পরিামণ বলকে \(1dyne\) বল বলে।
বলের SI একক:
বল = বস্তুর ভর\( \times \)ত্বরণ = \(m \times a = ma\)
তাই বলের একক = বস্তুর ভরের একক\( \times \)ত্বরণের একক
= কিগ্রা\( \times \) \(মি/{সেকেন্ড^2}\)
= \(kg.m/{s^2}\)
= \(kg.m.{s^{ - 2}}\)
= \(newton\)
\(1\) \(newton\) বলের সংজ্ঞা:
\(1kg\) ভরের কোনো বস্তুর ওপর যে পরিমাণ বল প্রযুক্ত হলে, ওই বস্তুতে ঠিক \(1m/{s^2}\) ত্বরণ সৃষ্টি হয়, সেই পরিামণ বলকে \(1newton\) বল বলে।
বলের CGS ও SI এককের মধ্যে সম্পর্ক:
\(1N = 1kg.m/{s^2}\)
\( = 1kg \times 1m/{s^2}\)
\( = {10^3}gm \times {10^2}cm/{s^2}\)
\( = {10^5}gm.cm/{s^2}\)
\( = 1dyne\)
নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র (Third Law of Motion):
প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীতমুখী একটি প্রতিক্রিয়া আছে।
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া (Action and Reaction): একটি বস্তু অপর একটি বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে, প্রথম বস্তু দ্বারা দ্বিতীয় বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বলকে ক্রিয়া বলে।
সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় বস্তুটিও প্রথম বস্তুর ওপর সমান এবং বিপরীতমুখী একটি বল প্রয়োগ করবে। এই দ্বিতীয় বস্তু দ্বারা প্রথম বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলটিকে প্রতিক্রিয়া বলে।
যেমন, একটি টেবিলের উপর হাত দিয়ে খাড়াভাবে বল প্রয়োগ করা হলে, এবং এই বল কার্যকরী অপ্রতিমিত বল হলে, নিউটনের প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্রানুযায়ী টেবিলটির মধ্যে ত্বরণ সৃষ্টি হবে। ফলে টেবিলটি প্রযুক্ত বলের অভিমুখে চলতে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, টেবিলটি প্রযুক্ত বলের অভিমুখে চলে না। হাত দিয়ে অনুভব করা যায় যে, টেবিলটিও বাধা দিচ্ছে অর্থাৎ হাতের উপর সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করছে। এখন প্রযুক্ত বল বাড়ালে বিপরীতমুখী বলটিও বাড়ে এবং হাতও স্থির থাকে। এক্ষেত্রে উপরের উদাহরণে, হাত, টেবিলের উপর খাড়াভাবে যে বল প্রয়োগ করে সেটি হল ‘ক্রিয়া’, সঙ্গে সঙ্গে টেবিলও হাতের উপর বিপরীত দিকে যে সমান বল প্রয়োগ করলো তা হল প্রতিক্রিয়া। এখানে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান হওয়ায়, টেবিলটির কোনো সরণ হয় না।
এখন এই ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া ভালোভাবে বুঝতে হলে, ধরাযাক একটি বালক রোলার (চাকা) লাগানো স্কেট (জুতো) পরে একটি দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে, দেওয়ালের উপর একটি বল প্রয়োগ করলো। এটি হল ক্রিয়া। যা বালকটি দেওয়ালের ওপর প্রয়োগ করে। সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, বালকটিও দেওয়াল থেকে ক্রমশ দূরে সরে আসে। কেন এমন হল? তাহলে নিশ্চই দেওয়ালও বালকটির ওপর সমান ও বিপরীতমুখী একটি বল, বালকটির ওপর ক্রিয়া করে। এটিই হল প্রতিক্রিয়া।
তাই নিউটনের তৃতীয় সূত্রে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত একটি প্রতিক্রিয়া আছে।
নিউটনের তৃতীয় সূত্র থেকে জানা যায়:
(1) প্রকৃতিতে একক বিচ্ছিন্ন বল বলে কিছু নেই। বল সর্বদা দুটি বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া রূপে বর্তমান থাকে। যখন বলা হয় একটি বল ক্রিয়া করে, তখন আসলে দুটি ক্রিয়াশীল বলের মধ্যে একটির কথাই বলা হয়।একটি বল হল অন্যটির পূরক। এবং ওরা একসঙ্গেই কাজ করে।
(2) ক্রিয়া যতক্ষন স্থায়ী হয়, প্রতিক্রিয়াও ততক্ষন স্থায়ী হয়। ক্রিয়া বন্ধ হলে, প্রতিক্রিয়া বলও বন্ধ হয়ে যায়।
(3) কোনো বস্তু স্থির বা গতিশীল অবস্থায় থাকাকালীন অথবা একটি অপরটিকে স্পর্শ করে বা স্পর্শ না করে পরস্পরের উপর বল প্রয়োগ করতে পারে এবং সব ক্ষেত্রেই নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি প্রযোজ্য হবে।
(4) ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বলদুটি কখনোই একই বস্তুতে সৃষ্টি হয় না।
(5) ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীতমুখী হলেও সাম্য স্থাপন করে না। কারণ, সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে দুটি সমান এবং বিপরীতমুখী বলকে একই বিন্দুতে ক্রিয়া করতে হবে। যেহেতু ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল দুটি ভিন্ন বস্তুর উপর প্রযুক্ত হয় তাই ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীতমুখী হলেও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
এক ব্যক্তি একটি চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় চেয়ারটিতে বল প্রয়োগ করে কখনোই উপরে উঠানো যায় না – কারণ
একটি লোক চেয়ারে বসে চেয়ারটিকে উঠানোর জন্যে চেয়ারে বসে থেকে যে ঊর্দ্ধমুখী বল প্রয়োগ করে, চেয়ারটিও ওই ব্যক্তির উপর সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে, অর্থাৎ ওই ব্যক্তির দ্বারা প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের প্রতিক্রিয়া বল একই বস্তুর সংস্থার আভ্যন্তরীন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া মাত্র। এখানে বাইরের বল অনুপস্থিত। এবং ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল একই বস্তুতে একই বিন্দুতে প্রযুক্ত হচ্ছে। তাই চেয়ারে বসে চেয়ারটিকে উপরে উঠানো যায় না।
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল সমান ও বিপরীত – এর একটি পরীক্ষামূলক প্রমান:
দুটি স্প্রীং-তুলা নিয়ে একটির হুকের সঙ্গে অপরটিকে আটকানো হল। এবার স্প্রীং তুলা দুটিকে বিপরীত দিকে সমান বলে টানলে দেখা যাবে স্প্রীং তুলা দুটির পাঠ সমান।
এবার ওই স্প্রীং তুলা জোড়ার একটি প্রান্তকে দেওয়ালের একটি হুকের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আটকে নিয়ে অপর প্রান্তটিকে আগের মতো সমান বল দিযে টানা হল। দেখা গেল, স্প্রীং তুলা দুটির কাঁটা আগের মতোই একই পাঠ দেখাচ্ছে। মনে হবে কেউ যেন হাত দিয়ে দেওয়ালে যুক্ত স্প্রীং তুলাটিকে দেওয়ালের দিকে টানছে। এখানে স্প্রীং এর খোলা প্রান্তে প্রযুক্ত বল বা (ক্রিয়া) এর ফলে দেওয়ালে আটকানো স্প্রীং তুলাটিতে প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয়েছে। তুলা দুটির সমান পাঠ প্রমাণ করে – ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া পরষ্পর সমান ও বিপরীতমুখী।
কোনো বস্তু যদি অসম বেগ নিয়ে, অর্থাৎ সময়ের সাথে সাথে যদি তার বেগের মান পরিবর্বাতিত হয় অর্থাৎ বাড়ে বা কমে অথবা বেগের মান একই থাকলেও যদি অভিমুখ পরিবর্তিত হয় বা বেগের মান ও অভিমুখ দুটিই পরিবর্তিত হয়, তখন ওই বস্তুর বেগ অসম হয়। বেগের এই অসমতার মাত্রা অর্থাৎ একক সময়ে কতটা বেগের পরিবর্তন হল, অর্থাৎ একক সময়ে বেগ কতটা বাড়লো বা কমলো তা পরিমাপের জন্য অপর একটি ভৌত রাশির ধারণা আনতে হয়। একে ত্বরণ বা মন্দন বলে।
যদি সময়ের সাথে সাথে বেগের মান বাড়তে থাকে, তখন আমরা বলি বস্তুটিতে ত্বরণ আছে, আবার সময়ের সাথে সাথে বেগের মান যদি কমতে থাকে তখন আমরা বলি বস্তুটিতে মন্দন আছে। এই ত্বরণ ও মন্দন দুটির একই অর্থ, একটি বেগ বাড়ার সময় ব্যবহার করা হয় ও মন্দন বেগ কমার সময় ব্যবহার করা হয়।
ত্বরণ (Acceleration):
সময়ের সাথে সাথে কোনো বস্তুর বেগ যদি বাড়তে থাকে, তাহলে বস্তুটির বেগ বৃদ্ধির হারকে অর্থাৎ একক সময়ে যে পরিমাণ বেগের বৃদ্ধি ঘটে, তাকে ওই বস্তুর ত্বরণ বলে।
যেহেতু বেগের মান ও অভিমুখ দুইই আছে, তাই ত্বরণেরও মান ও অভিমুখ দুইই আছে।
ধরাযাক, \({t_1}\) সময়ে একটি বস্তুর বেগ \(u\) এবং \({t_2}\) সময়ে ওই বস্তুর বেগ বেড়ে হয় \(v\)। এখানে \(v > u\)।
এখানে বেগের পরিবর্তন = অন্তিম বেগ - প্রাথমিক বেগ
বা, \(\Delta v = v - u\)
সময়কাল = \(\Delta t = \left( {{t_2} - {t_1}} \right) = t\) (ধরি)
অর্থাৎ \(\Delta t\) সময়কালে বস্তুটির মধ্যে বেগের পরিবর্তন হয় \(\Delta v\)
এখন ত্বরণের সংজ্ঞায় পাই, বেগ বৃদ্ধির হারকে ত্বরণ বলে, তাই
ত্বরণ (Acceleration) \( = a = \frac{{\Delta v}}{{\Delta t}} = \frac{{v - u}}{{{t_2} - {t_1}}} = \frac{{v - u}}{t}\)
মন্দন (Retardation):
সময়ের সাথে সাথে যদি কোনো বস্তুর বেগ কমতে থাকে, তাহলে বস্তুটির বেগ হ্রাসের হারকে অর্থাৎ একক সময়ে যে পরিমাণ বেগের হ্রাস ঘটে, তাকে ওই বস্তুর মন্দন বলে।
যেহেতু বেগের মান ও অভিমুখ দুইই আছে, তাই মন্দনের মান ও অভিমুখ দুইই আছে।
ধরাযাক, \({t_1}\) সময়ে একটি বস্তুর বেগ \(u\) এবং \({t_2}\) সময়ে ওই বস্তুর বেগ বেড়ে হয় \(v\)।
এখানে \(v < u\)। এখানে বেগের পরিবর্তন = অন্তিম বেগ - প্রাথমিক বেগ বা, \(\Delta v = u - v\) সময়কাল = \(\Delta t = \left( {{t_2} - {t_1}} \right) = t\) (ধরি) অর্থাৎ \(\Delta t\) সময়কালে বস্তুটির মধ্যে বেগের পরিবর্তন হয় \(\Delta v\) এখন মন্দনের সংজ্ঞায় পাই, বেগ হ্রাসের হারকে মন্দন বলে, তাই মন্দন (Retardation) \( = a = \frac{{\Delta v}}{{\Delta t}} = \frac{{v - u}}{{{t_2} - {t_1}}} = \frac{{v - u}}{t}\) মন্দনকে ঋনাত্বক ত্বরণ বলার কারণ:
ধরাযাক, কোনো বস্তুর প্রাথমিক বেগ \(u\) এবং
\(t\) সময় পরে বস্তুটির অন্তিম বেগ হয় \(v\)।
এখন \(v > u\) হলে অর্থাৎ বেগের বৃদ্ধি ঘটলে ত্বরণের সংজ্ঞা থেকে পাই, বেগ বৃদ্ধির হারকে ত্বরণ বলে।
এখানে \(t\) সময়ে বেগের পরিবর্তন হয় \(\Delta v = \left( {v - u} \right)\)।
সুতরাং বস্তুটির ত্বরণ \( = a = \frac{{\left( {v - u} \right)}}{t}\)
আবার \(u > v\) হলে অর্থাৎ বেগের হ্রাস ঘটলে মন্দনের সংজ্ঞা থেকে পাই, বেগ হ্রাসের হারকে মন্দন বলে।
এখানে \(t\) সময়ে বেগের পরিবর্তন হয় \(\Delta v = \left( {u - v} \right)\)।
সুতরাং বস্তুটির মন্দন \( = a = \frac{{\left( {u - v} \right)}}{t}\)
এখন বস্তুটির ত্বরণ \( = \frac{{\left( {v - u} \right)}}{t} = - \frac{{\left( {u - v} \right)}}{t} = - \) মন্দন।
তাই মন্দনকে বস্তুর ঋনাত্বক ত্বরণ বলে।
কোনো বস্তুর গতিবেগ আছে, কিন্তু ত্বরণ নেই - এমন হতে পারে কি?
কোনো বস্তু সমবেগে সরলরেখা বরাবর চলতে থাকলে, ওই অবস্থায় বস্তুটির বেগের মান ও অভিমুখ কোনোটিই পরিবর্তিত হয় না। এই অবস্থায় বস্তুটির বেগ থাকলেও তার ত্বরণ বা মন্দন থাকে না।
কোনো বস্তুর গতিবেগ না থাকলেও তার ত্বরণ কি থাকতে পারে?
কোনো বস্তুর গতিবেগ না থাকলেও তার ত্বরণ থাকতে পারে।
(1) যখন কোনো বস্তুকে উপরের দিকে ছোঁড়া হয়, অভিকর্ষের টানে বস্তুটির বেগ ক্রমশ কমতে থাকে, এবং একটি সর্বোচ্চ উচ্চতায় বস্তুটির বেগ শূন্য হয়ে যায়। তবুও এই সময় বস্তুটির উপর অভিকর্ষজ ত্বরণ কাজ করে। এই অভিকর্ষজ ত্বরণের জন্যেই বস্তুটি আবার নীচের দিকে নামতে থাকে।
অর্থাৎ, উপরের দিকে ছোঁড়া কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ উচ্চতায় বস্তুটির বেগ শূন্য হলেও তার ত্বরণ থাকে। এই ত্বরণের মান পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের মানের সমান হয়।
(2) কোনো সরল দোলকের গতির ক্ষেত্রে, দোলক পিন্ডের সর্বোচ্চ অবস্থানে তার বেগের মান শূন্য হলেও তার ত্বরণ থাকে, যার প্রভাবে দোলক পিন্ডটি পুনরায় দোলন শুরু করে।
বলের ধারণা (Concept of Force):
কোনো বস্তুর উপর বাইরে থেকে যা প্রয়োগ করে, স্থির বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয় কোনো বস্তুর আকার (Size) বা আকৃতির (Shape) পরিবর্তন করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয়, তাকে বল বলে।
সাধারণভাবে, কোনো বস্তুর উপর টান দেওয়া বা ঠেলা দেওয়াকে আমরা বল বলি। এই বলকে দেখা যায় না। কিন্তু এই বল কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত হলে, বল প্রয়োগের ফলাফলগুলি লক্ষ্য করা যায়। এই বল প্রয়োগের ফলে নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি দেখতে পাওয়া যায়:-
(i) কোনো স্থির বস্তুকে গতিশীল করা যায়।
(ii) কোনো গতিশীল বস্তুকে স্থির করা যায়।
(iii) কোনো গতিশীল বস্তুর গতির মান পরিবর্তন করা যায়।
(iv) বল প্রয়োগের ফলে কোনো গতিশীল বস্তুর গতির অভিমুখ পরিবর্তন করা যায়
(v) বল প্রয়োগের ফলে কোনো বস্তুর আকার ও আকৃতির পরিবর্তন করা যায়।
কোনো বস্তুর ওপর বল প্রযুক্ত হলে তার প্রভাব গুলি উল্লেখ করো:
(1) বল প্রয়োগে কোনো স্থির বস্তুকে গতিশীল করা যায়। যেমন:
মাটিতে রাখা একটু ফুটবলকে লাথি মারলে তা গড়াতে শুরু করে। আবার একটি স্থির দেওয়ালে বল প্রয়োগ করে দেওয়ালটি গতিশীল করার চেষ্টা করা হলেও, দেওয়ালটিকে নড়ানো যায় না। তাই বলা যায়, বল প্রয়োগ করে কোনো স্থির বস্তুকে গতিশীল করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয়।
(2) বল প্রয়োগে কোনো গতিশীল বস্তুকে স্থির করা যেতে পারে। যেমন
একজন ক্রিকেট খেলোয়াড় যখন ক্যাচ নেয়, তখন গতিশীল বলটিকে খেলোয়াড়টির হাত দ্বারা বল প্রয়োগ করে থামাতে পারে।
(3) বল প্রয়োগে কোনো গতিশীল বস্তুর গতির অভিমুখ পরিবর্তন করা যায়। যেমন,
ক্রিকেট খেলায় বোলারের ছোঁড়া বলকে ব্যাটসম্যান তার ব্যাটের দ্বারা বল প্রয়োগ করে বলের গতির অভিমুখ পরিবর্তন করে।
Force can change direction |
(4) বল প্রয়োগে বস্তুর আকার ও আকৃতির পরিবর্তন ঘটাতে পারে। যেমন,
একটি রবারের বলকে মেঝের উপর রেখে, বলটির উপর হাত দিয়ে বলটিকে চাপ দেওয়া হলে, বলটির আকৃতির পরিবর্তন হবে। আবার একটি স্প্রীংএর দুইপ্রান্ত বল প্রয়োগ করে স্প্রীংটির দৈর্ঘ্য বাড়ানো বা কমানো যায়, অর্থাৎ আকার ও আকৃতির পরিবর্তন ঘটানো যায়।
বল প্রয়োগের প্রভাব | উদাহরণ |
---|---|
(1) বল প্রয়োগে কোনো স্থির বস্তু গতিশীল হতে পারে। | (1) একজন সকার খেলোয়াড় বা একজন ফুটবল খেলোয়াড়, ফুটবলের উপর বা সকার বলের উপর বল প্রয়োগ করে, বলটিকে গতিশীল করতে পারে। |
(2) বল প্রয়োগে কোনো গতিশীল বস্তুকে স্থির করা যায়। | (2) ক্রিকেটের একজন ফিল্ডার বল প্রয়োগ দ্বারা একটি গতিশীল বলকে স্থির করতে সক্ষম হয়। |
(3) বল কোনো গতিশীল বস্তুর গতির পরিবর্তন করতে পারে। | (3) কোনো সাইকেল আরোহী, বায়ুর অনুকুলে গেলে বা বায়ুর প্রতিকুলে গেলে তার গতির মান পরিবর্তিত হয়ে যায়। |
(4) বল কোনো বস্তুর গতির অভিমুখ পরিবর্তিত করতে পারে। | (4) ক্রিকেট খেলায় একজন ব্যাটসম্যান ব্যাটের সাহায্যে বল প্রয়োগের দ্বারা বলের অভিমুখ পরিবর্তন করে। |
(5) বল কোনো বস্তুর আকার ও আকৃতির পরিবর্তন ঘটাতে পারে। | (5) একটি স্প্রীং এর দুইপ্রান্তে বল প্রয়োগের দ্বারা স্প্রীংটির আকারের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। বল প্রয়োগের দ্বারা স্প্রীংটির দৈর্ঘ্য বরাবর বাড়ানো বা কমানো যায়। |
প্রতিমিত বল (Balanced Force):
যদি কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত সমস্ত বলগুলির মানে ও দিকে তাদের যোগফল বা লব্ধি বল যদি শূন্য হয় তখন বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলকে প্রতিমিত বল বলে।
এই প্রতিমিত বল বস্তুর স্থির অবস্থা বা গতির অবস্থার বা গতির অভিমুখ কোনোটারই পরিবর্তন করতে পারে না অর্থাৎ স্থির অবস্থায় থাকা বস্তুর উপর প্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে বস্তুটি স্থিরই থাকবে আবার সরলরেখায় গতিশীল বস্তুর উপর প্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে তার গতিও একইরকম বজায় থাকবে, কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। মনে হবে বস্তুটির উপর কোনো বলই প্রযুক্ত হচ্ছে না
যেমন,
(1) একটি ভারী বাক্সকে একটি অমসৃণ তলের উপর উপর রেখে ঠেলার চেষ্টা করা হলে বাক্সটির উপর সামনের দিকে প্রযুক্ত বল ও বাক্স ও অমসৃণ তলের সংস্পর্শতলের মধ্যে ক্রিয়াশীল ঘর্ষণ বল দ্বারা প্রতিমিত হয় এক্ষেত্রে দুটি বলের ক্রিয়ার সৃষ্ট প্রতিমিত বলের জন্য বাক্সটিকে নড়ানো যায় না।
(2) দড়ি টানাটানি খেলায় দুটি দল একটি দড়িকে বিপরীত দিক থেকে সমান কিন্তু বিপরীতমুখী বলে টানলে দড়িটি কোনো পক্ষের দিকেই অগ্রসর হয় না বরং নিজের অবস্থানেই স্থির থাকে। এক্ষেত্রে উভয়দল দ্বারা প্রযুক্ত সমান ও বিপরীতমুখী বল দুটির ক্রিয়ায় প্রতিমিত বলের সৃষ্টি হয়।
(3) দুইজন ব্যক্তি একটি টেবিলের দুইপাশে দাঁড়িয়ে বিপরীত দিকে একই পরিমাণ বল প্রয়োগ করে ঠেলার চেষ্টা করা হলে টেবিলটি কোনো দিকেই নড়বে না কারন এক্ষেত্রে দুটি সমান ও বিপরীতমুখী বলের ক্রিয়ায় টেবিলটিতে প্রযুক্ত বল প্রতিমিত হয়ে যায়।
(4) একটি ব্লককে মেঝের উপর স্থির অবস্থায় রেখে ব্লকটির উপর দুটি সমমানের বল একই রেখা বরাবর বিপরীত দিকে একই সঙ্গে প্রযুক্ত করা হলে ব্লকটির মধ্যে কোনো গতির সৃষ্টি হবে না কারণ এক্ষেত্রে ব্লকটির উপর ক্রিয়াশীল দুটি সমমানের ও বিপরীত বলের ক্রিয়ায় একটি প্রতিমিত বল সংস্থা সৃষ্টি করে।
(5) এক ব্যক্তি একটি ভর্তি ব্যাগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক্ষেত্রে ব্যাগের ওজন উল্লম্বভাবে নীচের দিকে ক্রিয়াশীল আবার ব্যক্তি ব্যাগের ওপরব্যাগের ওজনের সমান ও বিপরীতমুখী একটি বল প্রয়োগ করছে এখানে ব্যাগের ওপর ক্রিয়াশীল বলগুলির লব্ধি শূন্য তাই ব্যাগের এখানে ওজন ও ব্যক্তি দ্বারা প্রযুক্ত বল একত্রে প্রতিমিত বল সংস্থা গঠন করে।
অপ্রতিমিত বল বা কার্যকর বল (Unbalanced Force):
যদি কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত সমস্ত বলগুলির মানে ও দিকে তাদের যোগফল বা লব্ধি বল যদি শূন্য না হয়, তখন বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলকে অপ্রতিমিত বল বা কার্যকর বল বলে।
এই অপ্রতিমিত বল বস্তুর স্থির অবস্থা বা গতির অবস্থার বা গতির অভিমুখ পরিবর্তন করতে পারে অর্থাৎ স্থির অবস্থায় থাকা বস্তুর উপর অপ্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে বস্তুটি গতিশীল হতে পারে, আবার কোনো গতিশীল বস্তুর উপর অপ্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে বস্তুটিকে স্থির করা যেতে পারে আবার বস্তুটির গতির অভিমুখ পরিবর্তন করা যেতে পারে বা তার গতিশীলতাও পরিবর্তন করা যেতে পারে।
যেমন,
(1) একটি ভারী বাক্সকে একটি অমসৃণ তলের উপর রেখে একটি বৃহৎ মানের বল দ্বারা টানা হলে বাক্সটি প্রযুক্ত বলের অভিমুখেই গতিশীল হয়, এক্ষেত্রে বাহ্যিক বল, বাক্স ও সংস্পর্শতলের মধ্যে ক্রিয়াশীল ঘর্ষণ বল অপেক্ষা বেশী হয়, তাই বস্তুটির উপর অপ্রতিমিত কাজ করে এবং এই অপ্রতিমিত বল প্রযুক্ত বলের অভিমুখেই হয় তাই বস্তুটি গতিশীল হতে শুরু করে।
(2) একটি টেবিলকে দুই বন্ধু মিলে একই দিকে \({F_1}\) ও \({F_2}\) মানের বল প্রযুক্ত করছে।
এক্ষেত্রে টেবিলটির ওপর প্রযুক্ত লব্ধি বল বা কার্যকর বল হল \(\left( {\overrightarrow {{F_1}} + \overrightarrow {{F_2}} } \right)\)।
তাই এখানে টেবিলটি তাদের বল প্রয়োগের অভিমুখ বরাবর গতিশীল হবে।
(3) আবার একটি টেবিলকে দুই বন্ধু মিলে বিপরীতদিকে দিকে \({F_1}\) ও \({F_2}\) মানের বল প্রয়োগ করছে।
এক্ষেত্রে \({F_1} > {F_2}\) হলে, টেবিলটির ওপর লব্ধি বা কার্যকর বল হয় \(\left( {\overrightarrow {{F_1}} - \overrightarrow {{F_2}} } \right)\)।
এক্ষেত্রে টেবিলটি \({F_1}\) বলের অভিমুখে গতিশীল হবেL
(4) আবার একটি টেবিলকে দুই বন্ধু মিলে বিপরীতদিকে দিকে \({F_1}\) ও \({F_2}\) মানের বল প্রয়োগ করছে।
এক্ষেত্রে টেবিলটির ওপর লব্ধি বা কার্যকর বল হয় \(\left( {\overrightarrow {{F_2}} - \overrightarrow {{F_1}} } \right)\)।
এক্ষেত্রে টেবিলটি \({F_2}\) বলের অভিমুখে গতিশীল হবে।
কোনো বস্তুর ওপর কার্যকর বল বা অপ্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে – কি কি হতে পারে?
কোনো বস্তুর ওপর অপ্রতিমিত বা কার্যকর বল বা লব্ধি বল প্রযুক্ত হলে, বস্তুটিতে ত্বরণ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ বস্তুটিতে গতির অর্থাৎ স্থির বা গতিশীল অবস্থায় মুলত বেগের পরিবর্তন ঘটবে। যেমন,
(1) স্থির বস্তু গতিশীল হতে পারে।
(2) গতিশীল বস্তু স্থির হতে পারে
(3) কোনো গতিশীল বস্তুর গতির মান পরিবর্তিত হতে পারে।
(4) গতিশীল বস্তুর গতির অভিমুখ পরিবর্তিত হতে পারে।
(5) গতিশীল বস্তুর বেগের মান ও অভিমুখ দুইই পরিবর্তিত হতে পারে।
(6) কোনো বস্তুর আকার ও আকৃতির পরিবর্তন ঘটতে পারে।
কোনো বস্তুর উপর প্রতিমিত বল প্রযুক্ত হলে বস্তুটির গতির পরিবর্তন হয় না, কিন্তু আকার ও আকৃতির পরিবর্তন হতে পারে - উদাহরণ দাও।
একটি স্প্রীং নিয়ে তাকে দুহাতে সমান পরিমান পরিমান ও বিপতীতমুখী বল প্রয়োগ করলে দেখা যায় স্প্রীং টি সংকুচিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে স্প্রীংটির উপর তার দুইপ্রান্তে সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করায় - স্প্রীংটির ওপর ক্রিয়াশীল লব্ধি বল অপ্রতিমিত বলের মান শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু তবুও স্প্রীংটির মধ্যে দৈর্ঘ্য বরাবর বিকৃতি দেখা যায়।
বাহ্যিক বল (External Force):
কোনো বস্তুর উপর বল প্রযুক্ত হওয়ার সময় যদি বলের প্রয়োগকারী এবং বস্তু আলাদা সংস্থা হয়, সেক্ষেত্রে ওই বল বস্তুর গতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়, অর্থাৎ বস্তুটিতে ত্বরণের সৃষ্টি হয়। এই বলকে বাহ্যিক বল বলে।
এক্ষেত্রে রিকশাচালক, বাইরে অর্থাৎ মাটিতে পা রেখে রিকশাটিকে ঠেললে রিকশাটির অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। আবার চেয়ারে না বসে, মাটিতে পা রেখে চেয়ারটিকে হাত দিয়ে ঠেললে চেয়ারটির অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। অর্থাৎ কোনো বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে গেলে অবশ্যই বস্তুটিতে বাহ্যিক ও অপ্রতিমিত বল প্রযুক্ত হওয়া একান্ত জরুরী।
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র (First Law of Newton):
বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল দ্বারা বস্তুর অবস্থার পরিবর্তনে বাধ্য না করলে, স্থির বস্তু চিরকাল স্থির অবস্থাতেই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখা বরাবর চলতে থাকবে।
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে জানা যায়:
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে দুটি বিষয় জানা যায়।
(1) পদার্থের একটি মৌলিক ধর্ম - জাড্যের ধারণা।
(2) বলের সংজ্ঞা বা ধারণা
(1) পদার্থের একটি মৌলিক ধর্ম - জাড্য (Inertia):
নিউটনের প্রথম গতিসূত্রে বলা হয়েছে যে - কোনো জড় বস্তু যদি স্থির অবস্থায় থাকে, তাহলে বাইরে থেকে তার ওপর বল প্রয়োগ না করলে, ওই বস্তুটি নিজে ওর স্থির অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে না। অর্থাৎ স্থির বস্তুর ধর্মই হল চিরকাল স্থির অবস্থায় থাকা।
আবার কোনো বস্তু যদি গতিশীল অবস্থায় থাকে, তাহলে বাইরে থেকে ওর ওপর বল প্রযুক্ত না করলে বস্তুটি নিজে থেকে তার গতিশীলতা অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। অর্থাৎ গতিশীল বস্তুর ধর্মই হল চিরকাল সমবেগে সরলরেখা বরাবর চলা।
তাই কোনো বস্তুর যে ধর্মের জন্য তার স্থির বা গতিশীল অবস্থার প্রবণতা দেখাও অর্থাৎ স্থির বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টাকে বাধা দেয়, সেই ধর্মকেই ওই বস্তুর জাড্য বলে। এই কারনে নিউটনের প্রথম গতিসূত্রটিকে জাড্যের সূত্রও বলা হয়।
কোনো বস্তুর জাড্য ধর্ম আলোচনা করতে গিয়ে দেখি, কোনো বস্তুর ভর যত বেশী হয়, তার জাড্য ধর্মও োো বেশী প্রকাশ পায়। যেমন কোনো হালকা বস্তুর তুলনায় ভারী বস্তুকে স্থির অবস্থা থেকে গতিশীল অবস্থায় আনতে বা গতিশীল অবস্থা থেকে স্থির অবস্থায় আনতে অনেক বেশী বল প্রয়োগ করতে হয়। তাই কোনো বস্তুর ভর যত বেশী হবে, তার জাড্য ধর্মও তত বেশী হবে। তাই, বলা যায় কোনো জড় বস্তুর ভরই হল জাড্যের পরিমাপ।
যে ধর্মের জন্য কোনো স্থির বস্তু চিরকাল স্থির অবস্থায় এবং গতিশীল বস্তু সর্বদা সমবেগে গতিশীল অবস্থায় থাকতে চায়। বস্তুর এই ধর্মকে জাড্য বা জড়তা (Inertia) বলে।
পদার্থের এই জাড্য ধর্ম আবার দুইরকমের:
(1) স্থিতিজাড্য (Inertia of Rest):
অচল বা স্থির অবস্থায় থাকা জড় বস্তুর চিরকাল স্থির অবস্থায় থাকার প্রবণতাকে স্থিতিজাড্য বলে।
নীম্নে স্থিতিজাড্যের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল:
(i) কোনো স্থির গাড়ী হঠাৎ চলতে শুরু করলে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়ে। কারণ গাড়ীটি যখন স্থির ছিল, তখন যাত্রীর সমগ্র দেহও স্থির ছিল। এখন হঠাৎ করে গাড়ীটি চলতে শুরু করলে যাত্রীর নীচের অংশ (পা) গাড়ীর সঙ্গে সংলগ্ন থাকায় তা গতিশীল হয়, কিন্তু যাত্রীর দেহের উপরের অংশ স্থিতিজাড্য ধর্মের জন্য স্থির থাকতে চায়। তাই যাত্রীরা পিছনের দিকে হেলে পড়ে।
(ii) একটি গ্লাসের উপর একটি কার্ড রাখা হল। ওই কার্ডের উপর একটি কয়েন রেখে কার্ডটিকে খুব জোরে টোকা দিলে কার্ডটি সরে যায়। কিন্তু কয়েনটি স্থিতিজাড্য ধর্মের জন্য আগের অবস্থানেই স্থির থাকতে চায়। ফলে কার্ডটি সরে গেলেও কয়েনটি গ্লাসের মধ্যে পড়ে যায়।
(iii) চা ভর্তি একটি কাপকে হঠাৎ করে সামনের দিকে টানা হলে, কিছু পরিমান চা পিছনের দিকে ছিটকে পড়ে। কারণ, কাপটিকে সামনের দিকে টানলে কাপ ও কাপের নীচের অংশের চা গতিশীল হয়। কিন্তু কাপের উপরের অংশের চা স্থিতিজাড্য ধর্মের জন্য তখনও স্থির অবস্থায় থাকতে চায়। ফলে কিছু পরিমাণ চা পিছনের দিকে ছিটকে পড়ে।
(iv) ভারী কোট বা কম্বলের উপর যে ময়লা বা ধূলিকণা জমে, তা সূতোর ফাঁকে ফাঁকে আলগাভাবে আটকে থাকে। এই সব জমে থাকা ময়লা ঝেড়ে থেলতে কোটটিকে ছড়ি দিয়ে বারবার আঘাত করা হয়। কোটের ওপর ছড়ি দিয়ে আঘাত করলে কোটটি সরে যায় (গতিশীল হয়), কিন্তু ময়লা, ধূলিকণা ও অন্যান্য কণা তার স্থিতিজাড্য ধর্মের জন্য একই স্থানে থাকতে চায়। ফলে ধূলিকণা ও অন্যান্য ময়লা কোনো অবলম্বন না পেয়ে কোট থেকে পৃথক হয়ে নীচে পড়ে যায়।
(2) গতিজাড্য (Inertia of Motion):
কোনো গতিশীল বস্তুর সমগতিতে সরলরেখা বরাবর গতিশীল অবস্থা বজায় রাখার প্রবণতাকে গতিজাড্য বলে।
যেমন,
(i) কোনো চলন্ত গাড়ী হঠাৎ করে থেমে গেলে যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কারণ গাড়ীটি যখন গতিশীল ছিল, গাড়ীর সঙ্গে সংলগ্ন যাত্রীর দেহও গতিশীল ছিল। এখন গাড়ীটি হঠাৎ থেমে গেলে, গাড়ীর সঙ্গে সংলগ্ন ব্যাক্তির নীড়ের অংশ (পা) স্থির হয়ে যায়, কিন্তু যাত্রীর উপরের অংশ গতিজাড্য ধর্মের জন্য (মাথা) তখনো গতিশীল অবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা করে। তাই যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
(ii) একটি ঘূর্ণায়মান বৈদ্যুতিক পাখার সুইচ অফ করে দিলেও পাখাটি বেশ কিছুক্ষণ ঘুরতে থাকে। কারণ সুইচ অন থাকা অবস্থায় পাখাটি ঘূর্ণায়মান ছিল। এখন সুইচ অফ করলে, পাখাটি তার গতিজাড্য ধর্ম বজায় রাখতে চেষ্টা করে। তাই সুইচ অফ করলেও পাখাটি আরও বেশ কিছুক্ষন ঘোরে স্থির হয়।
(iii) কোনো অ্যাথলিট, লংজাম্প দেওয়ার সময় দূর থেকে কিছুটা দৌড়ে আসে। কারণ দূর থেকে কিছুটা দৌড়ে আসলে ওই অ্যাথলিটের মধ্যে একটি গতিজাড্য ধর্মের সৃষ্টি হয় যার প্রভাবে সে, সাধারণের তুলনায় সীমা নির্দেশক ট্র্যাক থেকে অনেকটা বেশি লাফাতে পারে।
(iv) সমবেগে চলন্ত কোনো গাড়ীর মধ্যে কোনো ব্যক্তি যদি একটি বলকে সোজা উপরের দিকে ছুঁড়ে তাহলে কিছুক্ষণ পর বলটি আবার তার হাতেই এসে পড়ে, যদিও এই সময়ের মধ্যে গাড়ীটি সামনের দিকে কিছুটা এগিয়ে যায়। কারণ, বলটিকে উপরের দিকে ছোঁড়া হলে, গতিজাড্য ধর্মের জন্য বলটিও তার গতিবেগ বজায় রাখে, ফলে একই সময়ে বল ও যাত্রী একই পথ অতিক্রম করে, তাই বলটি আবার ব্যক্তির হাতেই এসে পড়ে।
(v) কোনো চলন্ত ট্রামগাড়ী থেকে আমরা যখন নামি, তখন পেছন দিকে হেলে নামি। কারণ চলন্ত গাড়ীতে থাকার সময় আমাদের দেহ ট্রামের সঙ্গেই গতিশীল থাকে। গাড়ী থেকে মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পা মাটিতে স্পর্শ করে এবং পা স্থির হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেহের উপরের অংশ গতি-জাড্য ধর্মের জন্য তখনও গতিশীল অবস্থায় থাকতে চায় এবং দেহের উপরের অংশ সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
এখন পেছনের দিকে হেলে না নামলে আমরা সামনের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়তে পারি। এটা আটকানোর জন্য পেছন দিকে হেলে নামতে হয়। এর ফলে দেহের উপরের অংশ কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে স্থির হয়ে যায়।, ফলে সামনের দিকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ভরবেগের ধারণা (Concept of Momentum):
কোনো গতিশীল বস্তুর ভর ও তার গতিবেগের সমন্বয়ে ওই বস্তুর মধ্যে যে গতীয় ধর্মের সৃষ্টি হয় তাকে ভরবেগ বলে। কোনো বস্তুর ভর \(m\) এবং তার গতিবেগ \(v\) হলে, ওই বস্তুর ভর ও বেগের গুনফল দ্বারা তার ভরবেগের পরিমাপ করা হয়।
অর্থাৎ ভরবেগ (Momentum) =ভর \( \times \) বেগ = \(m \times v\)
বল প্রয়োগের দ্বারা কোনো বস্তুর গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যায়। ধরাযাক দুটি আলাদা ভরের বস্তু স্থির অবস্থায় আছে। এখন ওই দুটি বস্তুর ওপর একই পরিমাণ বল প্রয়োগ করে বস্তু দুটিতে সম পরিমাণ বেগ উৎপন্ন করা যায় না। এক্ষেত্রে বস্তু দুটিতে সম পরিমাণ বেগ উৎপন্ন করতে হলে হালকা বস্তুটিতে কম বল প্রয়োগ করতে হবে এবং অপেক্ষাকৃত ভারী বস্তুটিতে বেশী বল প্রয়োগ করতে হবে। তাই এক্ষেত্রে বলা যায়, কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে বস্তুর বেগের যে পরিবর্তন ঘটে, তা বস্তুটির ভরের উপর নির্ভরশীল। কোনো গতিশীল বস্তুর ভর ও বেগের সমন্বয়ে ওই বস্তুর মধ্যে এক ধরণের গতীয় ধর্মের উদ্ভব হয়, যাকে আমরা প্রকাশ করার জন্য ভরবেগের ধারণা নিয়ে আসি।
কোনো গতিশীল বস্তুর ভরবেগ ভালোভাবে বুঝতে হলে নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি বোঝার চেষ্টা করি।
(1) ধরাযাক, একটি প্লাস্টিকের তৈরি হালকা রোলার তোমার চলার গতিপথে একটি নির্দিষ্ট মানের বেগ নিয়ে ধেয়ে আসছে। এই অবস্থায়, আমরা সহজেই ওই হালকা রোলারটিকে হাত দিয়ে বল প্রয়োগ করে থামাতে পারি। কিন্তু ধরাযাক, হুবহু একইরকমের একটি নিরেট লোহার তৈরি রোলার, ওই একই নির্দিষ্ট মানের বেগ নিয়ে এগিয়ে আসছে। এই অবস্থায় তোমার পক্ষে কি সম্ভব? যে – ওই লোহার তৈরি রোলারটিকে হাতের মাধ্যমে আটকে স্থির অবস্থায় আনা?
উত্তরটা নিশ্চই না। কারণ নিরেট লোহার রোলারটিতে তার অতিরিক্ত পরিমাণ ভর ও বেগের সমন্বয়ে একটি গতিশীল ধর্মের উদ্ভব হয় যা আমরা এক্ষেত্রে ভরবেগ বলি। এক্ষেত্রে হালকা প্লাস্টিকের রোলারটির ভরবেগ খুব কম হওয়ায় আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় শুধুমাত্র হাত দিয়ে আটকে দেওয়া। কিন্তু নিরেট লোহার রোলারটির ভরবেগ অনেক বেশী হওয়ায়, তাকে স্থির অবস্থায় আনতে অনেক বেশী পরিমান বল প্রয়োগের প্রয়োজন। তাও এটিকে আমরা শুধুমাত্র হাতের দ্বারা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে থামাতে পারিনা।
(2) যেমন, একটি খালি ট্রাক ও একটি মালবোঝাই ভারী ট্রাক যদি একই বেগ নিয়ে চলে তবুও, ভারী ট্রাকটির ভরবেগ বেশী হওয়ায়, তাকে থামাতে বেশী পরিমান বল প্রয়োগ করতে হবে, খালি ট্রাকের তুলনায়। আমার একই ভরের দুটি ট্রাকের মধ্যে একটি বেগ বেশী এবং অন্যটির বেগ কম। তখনো যার ভরবেগ বেশী তার গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে বেশী বল প্রয়োগ করতে হবে এবং যার ভরবেগ কম তার একই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে কম বল প্রয়োগ করলেই হবে।
(3) যে বস্তুর ভরবেগ বেশী, তার গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে বেশী পরিমান বল প্রয়োগ করতে হবে এবং যে বস্তুর ভরবেগ কম, তার গতিশীল অবস্থার একই পরিমাণ পরিবর্তন ঘটাতে কম বল প্রয়োগ করতে হবে।
একটি মালবাহী ট্রাক ও একটি খালি ট্রাক একই বেগ নিয়ে চলছে। ট্রাক দুটির গঠনও হুবহু একই। কোনটিকে থামাতে বেশী পরিমাণ বল প্রয়োগ করতে হবে?
এখানে ট্রাকদুটির গঠন হুবহু এক হলেও মালভর্তি ট্রাকটির ভর বেশী। কিন্তু উভয়ের বেগ একই হওয়ায়, মালবাহী ট্রাকটির ভরবেগ বেশী। এখন ট্রাকদুটিকে থামাতে অর্থাৎ স্থির অবস্থায় আনতে হলে, অর্থাৎ একই পরিমাণ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে, মালবাহী ট্রাকটিতে বেশী বল প্রয়োগ করতে হবে। কারণ মালবাহী ট্রাকটির ভরবেগ বেশী। নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রে এটাই বলা হয় যে, কোনো বস্তুর ভরবেগ পরিবর্তনের হার বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক। এখানে মালবাহী ট্রাকটির ভরবেগের পরিবর্তনের হার, খালি ট্রাকটির ভরবেগের পরিবর্তনের হারের থেকে বেশী। তাই মালবাহী ট্রাকে বেশী বল প্রয়োগ করতে হবে।
ভরবেগের CGS ও SI পদ্ধতিতে একক:
ভরবেগের CGS একক:
ভরবেগ = ভর\( \times \)বেগ = \(m \times v\)
তাই CGS পদ্ধতিতে ভরবেগের একক = ভরের একক \(m \times v\) বেগের একক
= ভর \( \times \) বেগ
= গ্রাম \( \times \) সেমি/সেকেন্ড
= গ্রাম.সেমি/সেকেন্ড
= \(gm.cm/s\)
= \(gm.cm.{s^{ - 1}}\)
ভরবেগের SI একক:
ভরবেগ = ভর\( \times \)বেগ = \(m \times v\)
তাই CGS পদ্ধতিতে ভরবেগের একক = ভরের একক \(m \times v\) বেগের একক
= ভর \( \times \) বেগ
= কিগ্রা \( \times \) মিটার/সেকেন্ড
= কিগ্রা.মি/সেকেন্ড
= \(kg.m/s\)
= \(kg.m.{s^{ - 1}}\)
নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র (Second Law of Motion):
কোনো বস্তুর ভরবেগ পরিবর্তনের হার, বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক। প্রযুক্ত বল যেদিকে ক্রিয়া করে, ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই হয়।
নিউটনের এই দ্বিতীয় গতিসূত্র থেকে কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের পরিমাপ নির্ণয় করা যায়।
\(m\) ভরের কোনো বস্তুতে a ত্বরণ সৃষ্টি করতে প্রয়োজনীয় বলের মান হয়:
\(F = m \times a = ma\)
অর্থাৎ বল=ভর\( \times \)ত্বরণ = \(F = m \times a = ma\)
CGS ও SI পদ্ধতিতে বলের পরম একক:
বলের CGS একক:
বল = বস্তুর ভর\( \times \)ত্বরণ = \(m \times a = ma\)
তাই বলের একক = বস্তুর ভরের একক\( \times \)ত্বরণের একক
= গ্রাম\( \times \) \(সেমি/{সেকেন্ড^2}\)
= \(gm.cm/{s^2}\)
= \(gm.cm.{s^{ - 2}}\)
= \(dyne\)
\(1\) \(dyne\) বলের সংজ্ঞা:
\(1gm\) ভরের কোনো বস্তুর ওপর যে পরিমাণ বল প্রযুক্ত হলে, ওই বস্তুতে ঠিক \(1cm/{s^2}\) ত্বরণ সৃষ্টি হয়, সেই পরিামণ বলকে \(1dyne\) বল বলে।
বলের SI একক:
বল = বস্তুর ভর\( \times \)ত্বরণ = \(m \times a = ma\)
তাই বলের একক = বস্তুর ভরের একক\( \times \)ত্বরণের একক
= কিগ্রা\( \times \) \(মি/{সেকেন্ড^2}\)
= \(kg.m/{s^2}\)
= \(kg.m.{s^{ - 2}}\)
= \(newton\)
\(1\) \(newton\) বলের সংজ্ঞা:
\(1kg\) ভরের কোনো বস্তুর ওপর যে পরিমাণ বল প্রযুক্ত হলে, ওই বস্তুতে ঠিক \(1m/{s^2}\) ত্বরণ সৃষ্টি হয়, সেই পরিামণ বলকে \(1newton\) বল বলে।
বলের CGS ও SI এককের মধ্যে সম্পর্ক:
\(1N = 1kg.m/{s^2}\)
\( = 1kg \times 1m/{s^2}\)
\( = {10^3}gm \times {10^2}cm/{s^2}\)
\( = {10^5}gm.cm/{s^2}\)
\( = 1dyne\)
নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র (Third Law of Motion):
প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীতমুখী একটি প্রতিক্রিয়া আছে।
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া (Action and Reaction): একটি বস্তু অপর একটি বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে, প্রথম বস্তু দ্বারা দ্বিতীয় বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বলকে ক্রিয়া বলে।
সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় বস্তুটিও প্রথম বস্তুর ওপর সমান এবং বিপরীতমুখী একটি বল প্রয়োগ করবে। এই দ্বিতীয় বস্তু দ্বারা প্রথম বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলটিকে প্রতিক্রিয়া বলে।
যেমন, একটি টেবিলের উপর হাত দিয়ে খাড়াভাবে বল প্রয়োগ করা হলে, এবং এই বল কার্যকরী অপ্রতিমিত বল হলে, নিউটনের প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্রানুযায়ী টেবিলটির মধ্যে ত্বরণ সৃষ্টি হবে। ফলে টেবিলটি প্রযুক্ত বলের অভিমুখে চলতে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, টেবিলটি প্রযুক্ত বলের অভিমুখে চলে না। হাত দিয়ে অনুভব করা যায় যে, টেবিলটিও বাধা দিচ্ছে অর্থাৎ হাতের উপর সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করছে। এখন প্রযুক্ত বল বাড়ালে বিপরীতমুখী বলটিও বাড়ে এবং হাতও স্থির থাকে। এক্ষেত্রে উপরের উদাহরণে, হাত, টেবিলের উপর খাড়াভাবে যে বল প্রয়োগ করে সেটি হল ‘ক্রিয়া’, সঙ্গে সঙ্গে টেবিলও হাতের উপর বিপরীত দিকে যে সমান বল প্রয়োগ করলো তা হল প্রতিক্রিয়া। এখানে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান হওয়ায়, টেবিলটির কোনো সরণ হয় না।
এখন এই ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া ভালোভাবে বুঝতে হলে, ধরাযাক একটি বালক রোলার (চাকা) লাগানো স্কেট (জুতো) পরে একটি দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে, দেওয়ালের উপর একটি বল প্রয়োগ করলো। এটি হল ক্রিয়া। যা বালকটি দেওয়ালের ওপর প্রয়োগ করে। সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, বালকটিও দেওয়াল থেকে ক্রমশ দূরে সরে আসে। কেন এমন হল? তাহলে নিশ্চই দেওয়ালও বালকটির ওপর সমান ও বিপরীতমুখী একটি বল, বালকটির ওপর ক্রিয়া করে। এটিই হল প্রতিক্রিয়া।
তাই নিউটনের তৃতীয় সূত্রে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত একটি প্রতিক্রিয়া আছে।
নিউটনের তৃতীয় সূত্র থেকে জানা যায়:
(1) প্রকৃতিতে একক বিচ্ছিন্ন বল বলে কিছু নেই। বল সর্বদা দুটি বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া রূপে বর্তমান থাকে। যখন বলা হয় একটি বল ক্রিয়া করে, তখন আসলে দুটি ক্রিয়াশীল বলের মধ্যে একটির কথাই বলা হয়।একটি বল হল অন্যটির পূরক। এবং ওরা একসঙ্গেই কাজ করে।
(2) ক্রিয়া যতক্ষন স্থায়ী হয়, প্রতিক্রিয়াও ততক্ষন স্থায়ী হয়। ক্রিয়া বন্ধ হলে, প্রতিক্রিয়া বলও বন্ধ হয়ে যায়।
(3) কোনো বস্তু স্থির বা গতিশীল অবস্থায় থাকাকালীন অথবা একটি অপরটিকে স্পর্শ করে বা স্পর্শ না করে পরস্পরের উপর বল প্রয়োগ করতে পারে এবং সব ক্ষেত্রেই নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি প্রযোজ্য হবে।
(4) ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বলদুটি কখনোই একই বস্তুতে সৃষ্টি হয় না।
(5) ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীতমুখী হলেও সাম্য স্থাপন করে না। কারণ, সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে দুটি সমান এবং বিপরীতমুখী বলকে একই বিন্দুতে ক্রিয়া করতে হবে। যেহেতু ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল দুটি ভিন্ন বস্তুর উপর প্রযুক্ত হয় তাই ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীতমুখী হলেও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
এক ব্যক্তি একটি চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় চেয়ারটিতে বল প্রয়োগ করে কখনোই উপরে উঠানো যায় না – কারণ
একটি লোক চেয়ারে বসে চেয়ারটিকে উঠানোর জন্যে চেয়ারে বসে থেকে যে ঊর্দ্ধমুখী বল প্রয়োগ করে, চেয়ারটিও ওই ব্যক্তির উপর সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে, অর্থাৎ ওই ব্যক্তির দ্বারা প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের প্রতিক্রিয়া বল একই বস্তুর সংস্থার আভ্যন্তরীন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া মাত্র। এখানে বাইরের বল অনুপস্থিত। এবং ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল একই বস্তুতে একই বিন্দুতে প্রযুক্ত হচ্ছে। তাই চেয়ারে বসে চেয়ারটিকে উপরে উঠানো যায় না।
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল সমান ও বিপরীত – এর একটি পরীক্ষামূলক প্রমান:
দুটি স্প্রীং-তুলা নিয়ে একটির হুকের সঙ্গে অপরটিকে আটকানো হল। এবার স্প্রীং তুলা দুটিকে বিপরীত দিকে সমান বলে টানলে দেখা যাবে স্প্রীং তুলা দুটির পাঠ সমান।
এবার ওই স্প্রীং তুলা জোড়ার একটি প্রান্তকে দেওয়ালের একটি হুকের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আটকে নিয়ে অপর প্রান্তটিকে আগের মতো সমান বল দিযে টানা হল। দেখা গেল, স্প্রীং তুলা দুটির কাঁটা আগের মতোই একই পাঠ দেখাচ্ছে। মনে হবে কেউ যেন হাত দিয়ে দেওয়ালে যুক্ত স্প্রীং তুলাটিকে দেওয়ালের দিকে টানছে। এখানে স্প্রীং এর খোলা প্রান্তে প্রযুক্ত বল বা (ক্রিয়া) এর ফলে দেওয়ালে আটকানো স্প্রীং তুলাটিতে প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয়েছে। তুলা দুটির সমান পাঠ প্রমাণ করে – ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া পরষ্পর সমান ও বিপরীতমুখী।
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া পরস্পর সমান ও বিপরীতমুখী। তাহলে গাছ থেকে পাকা ফল পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে কেন? পৃথিবী ফলের দিকে ছুটে যায় না কেন?
যেহেতু ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান, সেইজন্য পাকা ফল পৃথিবীকে যে বল দ্বারা আকর্ষণ করে, পৃথিবীই সেই একই বল দ্বারা পাকা ফলটিকে আকর্ষণ করে।
পৃথিবী যে বল দ্বারা পাকা ফলটিকে আকর্ষণ করে \({F_{fruit}}\) = (ফলের ভর) \( \times \) (ফলের ত্বরণ)
এবং পাকা ফলটি যে বল দ্বারা পৃথিবীকে আকর্ষণ করে \({F_{earth}}\) = (পৃথিবীর ভর) \( \div \)( \times \) (পৃথিবীর ত্বরণ)
এখানে, ফলের ত্বরণ \({a_{fruit}}\) = (পৃথিবী যে বল দ্বারা ফলটিকে আকর্ষণ করে)/(ফলের ভর)
এবং পৃথিবীর ত্বরণ \({a_{earth}}\) = (ফল যে বল দ্বারা পৃথিবীকে আকর্ষণ করে)\( \div \)(পৃথিবীর ভর)
এখানে পৃথিবী যে বল দিয়ে ফলকে আকর্ষণ করে এবং ফলও যে বল দিয়ে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে, এই দুটি আকর্ষণ বলের মান সমান।
অর্থাৎ \({F_{earth}} = {F_{fruit}}\)
বা, \({m_{earth}} \times {a_{earth}} = {m_{fruit}} \times {a_{fruit}}\)
বা, \(\frac{{{a_{earth}}}}{{{a_{fruit}}}} = \frac{{{m_{fruit}}}}{{{m_{earth}}}} < < 1\) বা, \({a_{earth}} << {a_{fruit}}\) বা, \({a_{fruit}} >> {a_{earth}}\)
এখানে পৃথিবীর ভর, ফলের ভরের তুলনায় বহুগুন বেশী, সেইহেতু পৃথিবীর ত্বরণ ফলের ত্বরণের তুলনায় এতই নগন্য (\({a_{earth}} << {a_{fruit}}\)) যা হিসেবেই আসে না। অর্থাৎ ফলের ত্বরণ পৃথিবীর ত্বরণের তুলনায় অনেক বেশী হওয়ায়, পৃথিবী ফলের দিকে ছুটে না এসে, পাকা ফলটি গাছ থেকে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। (1) কোনো আরোহী, নৌকা থেকে লাফ দিয়ে তীরে পৌঁছালে নৌকাটি পিছনের দিকে সরে যায়। নৌকা থেকে তীরে লাফ দেওয়ার সময়, আরোহী নৌকার উপর যে বল প্রয়োগ করে তা হল ক্রিয়া। এবং নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুযায়ী, এর ফলে নৌকাটিও আরোহীর উপর সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। এই প্রতিক্রিয়া বলের প্রভাবেই আরোহী সামনের দিকে গতিশীল হয়ে তীরে এসে পৌঁছায়। এবং সঙ্গে সঙ্গে নৌকাটিও পিছনের দিকে সরে যায়।
(2) ক্রিকেট খেলায় বোলার বল করলে ব্যাটস্ম্যান, ব্যাট দিয়ে বলটিকে আঘাত করে, ফলে বলের উপর ব্যাটের ক্রিয়ায় বলটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়। একই সময়ে বলটিও ব্যাটের উপর সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে, ফলে ব্যাটটি কিছুটা পিছনে সরে যায়। এখানে ক্রিয়া বল ক্রিকেট বলটির উপর এবং প্রতিক্রিয়া বল ব্যাটের উপর কাজ করে।
(3) নৌকার উপর দাঁড়িয়ে যখন মাঝি বাঁশের লগি দিয়ে খালের জলের তলায় মাটিতে তির্যকভাবে একটি বল প্রয়োগ করে, তখন মাটিও বাঁশের উপর এই ক্রিয়ার সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল তির্যকভাবে প্রয়োগ করে। এই তির্যক প্রতিক্রিয়া বলের অনুভূমিক উপাংশ নৌকাটিকে সামনের দিকে গতিশীল করে। যার ফলে নৌকাটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
(4) পাখি আকাশে ওড়ার সময় ডানা দিয়ে বাতাসের উপর বল প্রয়োগ করে। এই বল হল ক্রিয়া। ফলে বাতাসও পাখির ডানার উপর সমান ও বিপরীতমুখী একটি প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। এই প্রতিক্রিয়া বলই পাখিকে আকাশে উড়তে সাহায্য করে। কিন্তু বায়ুশূন্য স্থানে পাখি ডানা দিয়ে নীচের দিকে বল প্রয়োগ করলেও, বাতাস না থাকায় কোনো ক্রিয়া বল কার্যকর হয় না। তাই কোনো প্রতিক্রিয়া বলেরও সৃষ্টি হয় না। তাই বায়ুশূন্য স্থানে পাখি উড়তে পারে না।
(5) ক্রিকেট বলকে ক্যাচ ধরার সময় হাতের উপর ক্রিয়া বল প্রযুক্ত হয়। ফলে থাতও বলটির উপর একটি বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। এই প্রতিক্রিয়া বলকে প্রশমিত করতে খেলোয়াড় বল সহ হাতটিকে পিছনের দিকে টেনে নেয়।
(6) জেট বিমান ও রকেট এই নিউটনের তৃতীয় সূত্রের ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া বলের উপর ভিত্তি করেই চলাচল করে। জেট বিমান বা রকেটের ইঞ্জিনে একটি জ্বালানী কক্ষ থাকে। এই জ্বালানীর দহনের ফলে নিষ্ক্রান্ত গ্যাস বিমানের পিছন দিক দিয়ে দ্রুতবেগে নির্গত হয়, ফলে একটি ক্রিয়া বল প্রযুক্ত হয়। এই নির্গত গ্যাসের ফলে বিপরীতমুখী একটি প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয়। এই প্রতিক্রিয়া বলের জন্যই জেট বিমানটি সামনের দিকে অত্যন্ত দ্রুত বেগে এগিয়ে যায়।
(7) দেওয়ালির রাত্রে যখন হাউইবাজী আকাশে ওঠানো হয়, তখন এতে আগুন দিলে, এর ভিতরের বারুদের দহন হয়।, ফলে উৎপন্ন গ্যাস তীব্র গতিতে হাউইয়ের নীচের ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে আসে। এটি হল ক্রিয়া। এর ফলে যে প্রচন্ড বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয়, সেই প্রতিক্রিয়া বলের প্রভাবেই হাউইটিকে তীব্রবেগে উপরে আকাশের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।
(8) আমরা যখন হাঁটি, তখন পা দিয়ে মাটির উপর তির্যকভাবে বল প্রয়োগ করি। এটি ক্রিয়া বল। মাটিও তখন সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল পায়ের উপর প্রয়োগ করে, যার প্রভাবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই।
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীতমুখী হওয়া সত্ত্বেও কোনো বস্তুর মধ্যে গতির সৃষ্টি হয় কেন?
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সর্বদা সমান ও বিপরীতমুখেই ক্রিয়াশীল। কোনো উপায়ে ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া বল দুইটির মধ্যে একটি বলকে বা বলের উপাংশকে কার্যকর হওয়ার সুযোগ দিলে আর অন্যটিকে কার্যকর হতে না দিলে, যে বলটি কার্যকর হয়, সেই বলটির জন্য বস্তুটিতে গতির সৃষ্টি হয়।
কার্যের ধারণা (Concept of Work):
একটি বইকে মেঝে থেকে তুলে টেবিলের ওপর রাখা হল। আবার একটি ভারী আলমারীকে বল প্রয়োগ দ্বারা সরানোর চেষ্টা করা হল। কিন্তু কোনোভাবেই আলমারীটিকে সরানো গেলো না। বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুসারে, প্রথমটিতে কার্য করা হয়েছে বলে ধরা হয়, কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অনেক পরিশ্রম হলেও কোনো কার্য করা হয় না।
বাইরে থাকে বল প্রয়োগ করে কোনও বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারলে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় যে, বলটি কার্য করেছে। কিন্তু বল প্রয়োগ করা সত্তেও যদি বস্তুর অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না, অর্থাৎ সরণ হয় না, তাহলে ওই বল দ্বারা কোনো কার্যই হয় না।
প্রথম ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করে বইয়ের সরণ ঘটানো হল, তাই এক্ষেত্রে কার্য করা হল। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করা হলেও যেহেতু আলমারীর সরণ হয় না, সেইজন্যে এতে কোনো কার্য সম্পন্ন হয় না।
কার্যের সংজ্ঞা (Definition of Work):
কোনও বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে, যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ হয়, তখন ওই প্রযুক্ত বল কার্য করেছে বলে ধরা হয়। কোনো বস্তুর ওপর একটি বল প্রযুক্ত হয়ে কতখানি কার্য করেছে, তা পরিমাপ করা হয়, বস্তুটির উপর প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের অভিমুখে, বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণের গুণফলের দ্বারা কার্যের পরিমাপ করা হয়।
অর্থাৎ কোনো বস্তুর ওপর \(F\) বল প্রয়োগ করা হলে, যদি বস্তুটির সরণ \(d\) হয়,
তাহলে,
কৃতকার্য = প্রযুক্ত বল\( \times \)বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ।
বা, \(W = F.d\)
কার্য একটি স্কেলার রাশি:
কোনো বস্তুর ওপর একটি বল প্রযুক্ত হয়ে কতখানি কার্য করেছে, তা পরিমাপ করা হয়, বস্তুটির উপর প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের অভিমুখে, বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণের গুণফলের দ্বারা কার্যের পরিমাপ করা হয়।
অর্থাৎ
কার্য = প্রযুক্ত বল\( \times \)বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ।
এখানে প্রযুক্ত বল ও সরণ উভয়ই ভেক্টর রাশি হলেও, তাদের গুনফল কার্য একটি স্কেলার রাশি।
কার্যের CGS এবং SI একক:
কার্য = প্রযুক্ত বল\( \times \)বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ।
অর্থাৎ \(W = F.d\)
CGS পদ্ধতিতে কার্যের একক:
কার্য = প্রযুক্ত বল\( \times \)বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ।
অর্থাৎ \(W = F.d\)
বা, কার্যের একক = বলের একক\( \times \)সরণের একক।
= ডাইন\( \times \)সেমি
= আর্গ
SI পদ্ধতিতে কার্যের একক:
কার্য = প্রযুক্ত বল\( \times \)বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ।
অর্থাৎ \(W = F.d\)
বা, কার্যের একক = বলের একক\( \times \)সরণের একক।
= নিউটন\( \times \)মিটার
= জুল
CGS ও SI তে কার্যের এককের মধ্যে সম্পর্ক:
\(1Joule = 1N \times 1m\)
বা, \(1Joule = {10^5}dyne \times {10^2}cm\)
বা, \(1Joule = {10^7}dyne \times cm\)
বা, \(1Joule = {10^7}erg\)
বল প্রয়োগ করলেও কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে কার্য হয় না?
(i) কোনো বস্তুর ওপর বল ক্রিয়া করলেও, যদি বস্তুটির কোনো সরণ না ঘটে, স্থির থাকে তাহলে ওই বল কোনো কার্য করে না।
(ii) কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে, যদি বস্তুটির সরণ, প্রযুক্ত বলের অভিমুখের সাথে লম্বভাবে হয়, তখনও ওই বল দ্বারা কোনো কার্য হয় না।
বলের দ্বারা কার্য (Positive Work):
কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করা হলে, বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ যদি প্রযুক্ত বলের দিকেই হয়, তখন ওই কার্যকে বলা হয় বলের দ্বারা কার্য বা বল দ্বারা কার্য করা হয়েছে। এই ধরনের কার্যকে ধনাত্বক কার্য বলে।
যেমন,
(i) একটি কাঠের ব্লক মেঝের উপর রাখা আছে। এখন ব্লকটিতে একটি নির্দিষ্ট দিকে বল প্রয়োগ করা হলে, ব্লকটি ওই প্রযুক্ত বলের অভিমুখেই গতিশীল হয় অর্থাৎ প্রযুক্ত বলের অভিমুখেই সরণ ঘটে। এই বল দ্বারা কৃতকার্য হল ধনাত্বক কার্য বা বলের দ্বারা কার্য।
(ii) একটি পাথরখন্ড যখন মুক্তভাবে অবাধে নীচের দিকে পড়তে থাকে, তখন পৃথিবীর অভিকর্ষ বল নীচের দিকে ক্রিয়াশীল এবং পাথরখন্ডটির সরণও নীচের দিকে। তাই এই অভিকর্ষ বল দ্বারা অবাধে পতনশীল বস্তুর উপর কৃতকার্য হল বলের দ্বারা কার্য বা ধনাত্বক কার্য।
বলের বিরূদ্ধে কার্য (Negative Work):
কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করা হলে, বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ যদি প্রযুক্ত বলের অভিমুখের বিপরীত দিকে হয়, তখন ওই কার্যকে বলা হয় বলের বিরূদ্ধে কার্য বা বলের উপর কার্য করা হয়েছে। এই ধরনের কার্যকে ঋনাত্বক কার্য বলে।
যেমন,
(i) একটি বইকে টেবিল থেকে উপরের দিকে ওঠালে, এক্ষেত্রে অভিকর্ষ বলের বিরঢদ্ধে কার্য করতে হয়। বইটিকে উপরের দিকে তুললে অভিকর্ষ বল নীচের দিকে ক্রিয়া করে এবং বইটির সরণ হয় উপরের দিকে, অর্থাৎ বিপরীতমুখী। এই কার্য হল বলের বিরুদ্ধে কার্য বা ঋনাত্বক কার্য।
(ii) একটি বস্তুকে যখন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে ছোঁড়া হয়, তখন বস্তুটির উপর অভিকর্ষ বল কাজ করে নীচের দিকে কিন্তু বস্তুটির সরণ হয় উপরের দিকে। তাই এই কার্য হল অভিকর্ষ বলের বিরূদ্ধে কার্য বা ঋনাত্বক কার্য।
শক্তি (Energy):
কোনও বস্তুর কার্য করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে। কোনও বস্তুর ওপর শক্তি প্রযুক্ত হলে, বস্তুটি কার্য করার সামর্থ্য পায়, কার্য সম্পাদন করে।
একটি বস্তু বিশেষ কোনো অবস্থায় যতটা কার্য করতে পারে তাই হল বস্তুটির শক্তির পরিমাপ। সেইজন্য শক্তিকে কার্যের একক দিয়েই মাপা হয়।
কার্যের ন্যায় শক্তিও একটি স্কেলার রাশি।
যেহেতু ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান, সেইজন্য পাকা ফল পৃথিবীকে যে বল দ্বারা আকর্ষণ করে, পৃথিবীই সেই একই বল দ্বারা পাকা ফলটিকে আকর্ষণ করে।
পৃথিবী যে বল দ্বারা পাকা ফলটিকে আকর্ষণ করে \({F_{fruit}}\) = (ফলের ভর) \( \times \) (ফলের ত্বরণ)
এবং পাকা ফলটি যে বল দ্বারা পৃথিবীকে আকর্ষণ করে \({F_{earth}}\) = (পৃথিবীর ভর) \( \div \)( \times \) (পৃথিবীর ত্বরণ)
এখানে, ফলের ত্বরণ \({a_{fruit}}\) = (পৃথিবী যে বল দ্বারা ফলটিকে আকর্ষণ করে)/(ফলের ভর)
এবং পৃথিবীর ত্বরণ \({a_{earth}}\) = (ফল যে বল দ্বারা পৃথিবীকে আকর্ষণ করে)\( \div \)(পৃথিবীর ভর)
এখানে পৃথিবী যে বল দিয়ে ফলকে আকর্ষণ করে এবং ফলও যে বল দিয়ে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে, এই দুটি আকর্ষণ বলের মান সমান।
অর্থাৎ \({F_{earth}} = {F_{fruit}}\)
বা, \({m_{earth}} \times {a_{earth}} = {m_{fruit}} \times {a_{fruit}}\)
বা, \(\frac{{{a_{earth}}}}{{{a_{fruit}}}} = \frac{{{m_{fruit}}}}{{{m_{earth}}}} < < 1\) বা, \({a_{earth}} << {a_{fruit}}\) বা, \({a_{fruit}} >> {a_{earth}}\)
এখানে পৃথিবীর ভর, ফলের ভরের তুলনায় বহুগুন বেশী, সেইহেতু পৃথিবীর ত্বরণ ফলের ত্বরণের তুলনায় এতই নগন্য (\({a_{earth}} << {a_{fruit}}\)) যা হিসেবেই আসে না। অর্থাৎ ফলের ত্বরণ পৃথিবীর ত্বরণের তুলনায় অনেক বেশী হওয়ায়, পৃথিবী ফলের দিকে ছুটে না এসে, পাকা ফলটি গাছ থেকে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। (1) কোনো আরোহী, নৌকা থেকে লাফ দিয়ে তীরে পৌঁছালে নৌকাটি পিছনের দিকে সরে যায়। নৌকা থেকে তীরে লাফ দেওয়ার সময়, আরোহী নৌকার উপর যে বল প্রয়োগ করে তা হল ক্রিয়া। এবং নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুযায়ী, এর ফলে নৌকাটিও আরোহীর উপর সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। এই প্রতিক্রিয়া বলের প্রভাবেই আরোহী সামনের দিকে গতিশীল হয়ে তীরে এসে পৌঁছায়। এবং সঙ্গে সঙ্গে নৌকাটিও পিছনের দিকে সরে যায়।
(2) ক্রিকেট খেলায় বোলার বল করলে ব্যাটস্ম্যান, ব্যাট দিয়ে বলটিকে আঘাত করে, ফলে বলের উপর ব্যাটের ক্রিয়ায় বলটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়। একই সময়ে বলটিও ব্যাটের উপর সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে, ফলে ব্যাটটি কিছুটা পিছনে সরে যায়। এখানে ক্রিয়া বল ক্রিকেট বলটির উপর এবং প্রতিক্রিয়া বল ব্যাটের উপর কাজ করে।
(3) নৌকার উপর দাঁড়িয়ে যখন মাঝি বাঁশের লগি দিয়ে খালের জলের তলায় মাটিতে তির্যকভাবে একটি বল প্রয়োগ করে, তখন মাটিও বাঁশের উপর এই ক্রিয়ার সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল তির্যকভাবে প্রয়োগ করে। এই তির্যক প্রতিক্রিয়া বলের অনুভূমিক উপাংশ নৌকাটিকে সামনের দিকে গতিশীল করে। যার ফলে নৌকাটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
(4) পাখি আকাশে ওড়ার সময় ডানা দিয়ে বাতাসের উপর বল প্রয়োগ করে। এই বল হল ক্রিয়া। ফলে বাতাসও পাখির ডানার উপর সমান ও বিপরীতমুখী একটি প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। এই প্রতিক্রিয়া বলই পাখিকে আকাশে উড়তে সাহায্য করে। কিন্তু বায়ুশূন্য স্থানে পাখি ডানা দিয়ে নীচের দিকে বল প্রয়োগ করলেও, বাতাস না থাকায় কোনো ক্রিয়া বল কার্যকর হয় না। তাই কোনো প্রতিক্রিয়া বলেরও সৃষ্টি হয় না। তাই বায়ুশূন্য স্থানে পাখি উড়তে পারে না।
(5) ক্রিকেট বলকে ক্যাচ ধরার সময় হাতের উপর ক্রিয়া বল প্রযুক্ত হয়। ফলে থাতও বলটির উপর একটি বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। এই প্রতিক্রিয়া বলকে প্রশমিত করতে খেলোয়াড় বল সহ হাতটিকে পিছনের দিকে টেনে নেয়।
(6) জেট বিমান ও রকেট এই নিউটনের তৃতীয় সূত্রের ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া বলের উপর ভিত্তি করেই চলাচল করে। জেট বিমান বা রকেটের ইঞ্জিনে একটি জ্বালানী কক্ষ থাকে। এই জ্বালানীর দহনের ফলে নিষ্ক্রান্ত গ্যাস বিমানের পিছন দিক দিয়ে দ্রুতবেগে নির্গত হয়, ফলে একটি ক্রিয়া বল প্রযুক্ত হয়। এই নির্গত গ্যাসের ফলে বিপরীতমুখী একটি প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয়। এই প্রতিক্রিয়া বলের জন্যই জেট বিমানটি সামনের দিকে অত্যন্ত দ্রুত বেগে এগিয়ে যায়।
(7) দেওয়ালির রাত্রে যখন হাউইবাজী আকাশে ওঠানো হয়, তখন এতে আগুন দিলে, এর ভিতরের বারুদের দহন হয়।, ফলে উৎপন্ন গ্যাস তীব্র গতিতে হাউইয়ের নীচের ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে আসে। এটি হল ক্রিয়া। এর ফলে যে প্রচন্ড বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয়, সেই প্রতিক্রিয়া বলের প্রভাবেই হাউইটিকে তীব্রবেগে উপরে আকাশের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।
(8) আমরা যখন হাঁটি, তখন পা দিয়ে মাটির উপর তির্যকভাবে বল প্রয়োগ করি। এটি ক্রিয়া বল। মাটিও তখন সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল পায়ের উপর প্রয়োগ করে, যার প্রভাবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই।
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীতমুখী হওয়া সত্ত্বেও কোনো বস্তুর মধ্যে গতির সৃষ্টি হয় কেন?
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সর্বদা সমান ও বিপরীতমুখেই ক্রিয়াশীল। কোনো উপায়ে ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া বল দুইটির মধ্যে একটি বলকে বা বলের উপাংশকে কার্যকর হওয়ার সুযোগ দিলে আর অন্যটিকে কার্যকর হতে না দিলে, যে বলটি কার্যকর হয়, সেই বলটির জন্য বস্তুটিতে গতির সৃষ্টি হয়।
কার্যের ধারণা (Concept of Work):
একটি বইকে মেঝে থেকে তুলে টেবিলের ওপর রাখা হল। আবার একটি ভারী আলমারীকে বল প্রয়োগ দ্বারা সরানোর চেষ্টা করা হল। কিন্তু কোনোভাবেই আলমারীটিকে সরানো গেলো না। বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুসারে, প্রথমটিতে কার্য করা হয়েছে বলে ধরা হয়, কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অনেক পরিশ্রম হলেও কোনো কার্য করা হয় না।
বাইরে থাকে বল প্রয়োগ করে কোনও বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারলে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় যে, বলটি কার্য করেছে। কিন্তু বল প্রয়োগ করা সত্তেও যদি বস্তুর অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না, অর্থাৎ সরণ হয় না, তাহলে ওই বল দ্বারা কোনো কার্যই হয় না।
প্রথম ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করে বইয়ের সরণ ঘটানো হল, তাই এক্ষেত্রে কার্য করা হল। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করা হলেও যেহেতু আলমারীর সরণ হয় না, সেইজন্যে এতে কোনো কার্য সম্পন্ন হয় না।
কার্যের সংজ্ঞা (Definition of Work):
কোনও বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে, যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ হয়, তখন ওই প্রযুক্ত বল কার্য করেছে বলে ধরা হয়। কোনো বস্তুর ওপর একটি বল প্রযুক্ত হয়ে কতখানি কার্য করেছে, তা পরিমাপ করা হয়, বস্তুটির উপর প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের অভিমুখে, বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণের গুণফলের দ্বারা কার্যের পরিমাপ করা হয়।
অর্থাৎ কোনো বস্তুর ওপর \(F\) বল প্রয়োগ করা হলে, যদি বস্তুটির সরণ \(d\) হয়,
তাহলে,
কৃতকার্য = প্রযুক্ত বল\( \times \)বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ।
বা, \(W = F.d\)
কার্য একটি স্কেলার রাশি:
কোনো বস্তুর ওপর একটি বল প্রযুক্ত হয়ে কতখানি কার্য করেছে, তা পরিমাপ করা হয়, বস্তুটির উপর প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের অভিমুখে, বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণের গুণফলের দ্বারা কার্যের পরিমাপ করা হয়।
অর্থাৎ
কার্য = প্রযুক্ত বল\( \times \)বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ।
এখানে প্রযুক্ত বল ও সরণ উভয়ই ভেক্টর রাশি হলেও, তাদের গুনফল কার্য একটি স্কেলার রাশি।
কার্যের CGS এবং SI একক:
কার্য = প্রযুক্ত বল\( \times \)বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ।
অর্থাৎ \(W = F.d\)
CGS পদ্ধতিতে কার্যের একক:
কার্য = প্রযুক্ত বল\( \times \)বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ।
অর্থাৎ \(W = F.d\)
বা, কার্যের একক = বলের একক\( \times \)সরণের একক।
= ডাইন\( \times \)সেমি
= আর্গ
SI পদ্ধতিতে কার্যের একক:
কার্য = প্রযুক্ত বল\( \times \)বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ।
অর্থাৎ \(W = F.d\)
বা, কার্যের একক = বলের একক\( \times \)সরণের একক।
= নিউটন\( \times \)মিটার
= জুল
CGS ও SI তে কার্যের এককের মধ্যে সম্পর্ক:
\(1Joule = 1N \times 1m\)
বা, \(1Joule = {10^5}dyne \times {10^2}cm\)
বা, \(1Joule = {10^7}dyne \times cm\)
বা, \(1Joule = {10^7}erg\)
বল প্রয়োগ করলেও কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে কার্য হয় না?
(i) কোনো বস্তুর ওপর বল ক্রিয়া করলেও, যদি বস্তুটির কোনো সরণ না ঘটে, স্থির থাকে তাহলে ওই বল কোনো কার্য করে না।
(ii) কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে, যদি বস্তুটির সরণ, প্রযুক্ত বলের অভিমুখের সাথে লম্বভাবে হয়, তখনও ওই বল দ্বারা কোনো কার্য হয় না।
বলের দ্বারা কার্য (Positive Work):
কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করা হলে, বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ যদি প্রযুক্ত বলের দিকেই হয়, তখন ওই কার্যকে বলা হয় বলের দ্বারা কার্য বা বল দ্বারা কার্য করা হয়েছে। এই ধরনের কার্যকে ধনাত্বক কার্য বলে।
যেমন,
(i) একটি কাঠের ব্লক মেঝের উপর রাখা আছে। এখন ব্লকটিতে একটি নির্দিষ্ট দিকে বল প্রয়োগ করা হলে, ব্লকটি ওই প্রযুক্ত বলের অভিমুখেই গতিশীল হয় অর্থাৎ প্রযুক্ত বলের অভিমুখেই সরণ ঘটে। এই বল দ্বারা কৃতকার্য হল ধনাত্বক কার্য বা বলের দ্বারা কার্য।
(ii) একটি পাথরখন্ড যখন মুক্তভাবে অবাধে নীচের দিকে পড়তে থাকে, তখন পৃথিবীর অভিকর্ষ বল নীচের দিকে ক্রিয়াশীল এবং পাথরখন্ডটির সরণও নীচের দিকে। তাই এই অভিকর্ষ বল দ্বারা অবাধে পতনশীল বস্তুর উপর কৃতকার্য হল বলের দ্বারা কার্য বা ধনাত্বক কার্য।
বলের বিরূদ্ধে কার্য (Negative Work):
কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করা হলে, বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ যদি প্রযুক্ত বলের অভিমুখের বিপরীত দিকে হয়, তখন ওই কার্যকে বলা হয় বলের বিরূদ্ধে কার্য বা বলের উপর কার্য করা হয়েছে। এই ধরনের কার্যকে ঋনাত্বক কার্য বলে।
যেমন,
(i) একটি বইকে টেবিল থেকে উপরের দিকে ওঠালে, এক্ষেত্রে অভিকর্ষ বলের বিরঢদ্ধে কার্য করতে হয়। বইটিকে উপরের দিকে তুললে অভিকর্ষ বল নীচের দিকে ক্রিয়া করে এবং বইটির সরণ হয় উপরের দিকে, অর্থাৎ বিপরীতমুখী। এই কার্য হল বলের বিরুদ্ধে কার্য বা ঋনাত্বক কার্য।
(ii) একটি বস্তুকে যখন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে ছোঁড়া হয়, তখন বস্তুটির উপর অভিকর্ষ বল কাজ করে নীচের দিকে কিন্তু বস্তুটির সরণ হয় উপরের দিকে। তাই এই কার্য হল অভিকর্ষ বলের বিরূদ্ধে কার্য বা ঋনাত্বক কার্য।
শক্তি (Energy):
কোনও বস্তুর কার্য করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে। কোনও বস্তুর ওপর শক্তি প্রযুক্ত হলে, বস্তুটি কার্য করার সামর্থ্য পায়, কার্য সম্পাদন করে।
একটি বস্তু বিশেষ কোনো অবস্থায় যতটা কার্য করতে পারে তাই হল বস্তুটির শক্তির পরিমাপ। সেইজন্য শক্তিকে কার্যের একক দিয়েই মাপা হয়।
কার্যের ন্যায় শক্তিও একটি স্কেলার রাশি।
This comment has been removed by the author.
ReplyDeletesdgdsg g dg dagf daf fd asf ass
ReplyDelete