দুটি আলাদা বিভবের বস্তুকে একটি পরিবাহী তার দ্বারা যুক্ত করা হলে, নিম্নবিভবের বস্তু থেকে উচ্চবিভবের বস্তুতে ইলেকট্রন পরিবহনের ফলে বস্তুদুটির মধ্যে একটি তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, যতক্ষন না বস্তুদুটির বিভব সমান হয়। তাই এখানে তড়িৎ পরিবহন করে পরিবাহীর মধ্যে থাকা মুক্ত ইলেকট্রন।
বায়ুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপরিবহন:
বায়ু তড়িতের অপরিবাহী। তাই সাধারণ অবস্থায় বায়ুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপরিবহন করে না। কিন্তু দুটি তড়িৎগ্রস্থ বস্তুর মধ্যে বিভবের পার্থক্য খুব বেশি হলে এবং বস্তুদুটিকে খুব কাছাকাছি আনলে, বস্তুদুটির মধ্যবর্তী ব্যবধানে তড়িৎ স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়। কারণ, সাধারণ অবস্থায় বায়ুর মধ্যে কিছু আয়ন ও তড়িৎগ্রস্থ অণু বর্তমান থাকে। এই অবস্থায় বিপরীত তড়িৎগ্রস্থের দুটি বস্তুকে পরস্পর কাছে আনলে ওদের মাঝখানে একটি তড়িৎক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এই তড়িৎক্ষেত্রের মধ্যে থাকা বায়ুর আয়ন ও তড়িৎগ্রস্থ অণু থাকলে তারা এই তড়িৎক্ষেত্রের প্রভাবে নিজের তড়িতের বিপরীত তড়িৎগ্রস্থ বস্তুর দিকে ছুটতে থাকে। এই অবস্থায় বায়ুর অন্যান্য নিস্তড়িৎ অণু ও আয়নগুলিকে ধাক্কা দেয়। আয়নের বেগ খুব বেশী হলে, ওই আয়ন, নিস্তড়িৎ অণু থেকে ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন করে এবং বায়ুর অন্যান্য নিস্তড়িৎ অনুগুলিও আয়নিত হয়ে যায়। ক্রমাগত এই সংঘর্ষের ফলে বস্তুদুটির মাঝের আয়নের সংখ্যা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এবং ক্রমশ বিপরীত তড়িৎগ্রস্থের বস্তুদুটি প্রশমিত হতে থাকে এবং তাদের মাঝে তড়িৎস্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয়।
বায়ু তড়িৎপরিবহন করতে পারে না তার কারণ:
সাধারণ অবস্থায় বায়ুর মধ্যে সামান্য আয়ন ও তড়িৎগ্রস্থ অণু থাকলেও, কোনও মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। তাই বিপরীত তড়িৎগ্রস্থের দুটি বস্তুকে পরস্পর থেকে দূরে রাখলে ওই বস্তুদুটির মাঝের বায়ু তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না। কারণ সাধারণ চাপে বায়ুর অণুগুলি খুব কাছাকাছি থাকে, তাই ওই বিপরীত তড়িৎগ্রস্থ বস্তু দুটির মাঝে অনেক অণুর ভীড় থাকে। এর মধ্য কোনও আয়ন বা তড়িৎগ্রস্থ অণু এই তড়িৎক্ষেত্রের প্রভাবে, প্রভাবিত হয়ে কোনও নতুন আয়ন উৎপন্নের জন্য যে বেগ দরকার, তা অর্জন করার পূর্বেই অন্য কোনও অনুর সাথে সংঘাত ঘটে যায়, ফলে নিজের বেগ হারায়। তাই আর কোনও নতুন আয়ন বা তড়িৎগ্রস্থ পরমাণু উৎপন্ন হতে না। তাই সাধারন চাপে বায়ুর মধ্যে তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না।
বায়ু বা গ্যাস কোন্ অবস্থায় তড়িৎপরিবহন করে?
দুটি বিপরীত তড়িৎগ্রস্থ বস্তুদুটির মধ্যে যদি বায়ুর চাপ খুব কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ওই বস্তুদুটির মাঝে থাকা অণু বা আয়নের সংখ্যা অনেক কমে যায়, এবং অণুগুলির পারস্পরিক দূরত্ব (Inter-molecular distance) বেড়ে যায়। এই অবস্থায় বস্তুদুটির মাঝে থাকা আয়ন বা অণুর সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে, ওই তড়িৎক্ষেত্রের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে অন্য কোনও অণু বা আয়নের সাথে সংঘর্ষের পূর্বেই যথেষ্ট বেগ অর্জন করে বিপরীত তড়িৎগ্রস্থ বস্তুটির দিকে ছুটে যায়। এই অবস্থায় কোনো নিস্তড়িৎ অণুর সাথে বা আয়নের সাথে সংঘর্ষ ঘটিয়ে আরও অনেক আয়ন বা তড়িৎগ্রস্থ অন্য সৃষ্টি করতে পারে। এই অবস্থায় দুটি তড়িৎগ্রস্থ বস্তুর মধ্যে বায়ুর মাধ্যমেই তড়িৎপরিবহন প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
এখন এই বিপরীত তড়িৎগ্রস্থ বস্তুদুটির মধ্যকার বায়ুর চাপ ক্রমশ কমাতে থাকলে তড়িৎপরিবহণের ক্ষমতাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। কিন্তু একদম একদম খুব কমিয়ে দিলে অনু বা আয়নের সংখ্যা অত্যন্ত কমে গেলে আর তড়িৎপরিবহণ করতে পারে না। কারণ সেক্ষেত্রে নতুন আয়ন বা তড়িৎগ্রস্থ পরমাণু সৃষ্টি করার সুযোগ থাকে না।
তড়িৎমোক্ষন (Electric discharge):
সাধারাণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাস তড়িতের অপরিবাহী। কিন্তু কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে বায়ু বা গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহ করার ঘটনাকে তড়িৎমোক্ষন বলে।
সাধারণ অবস্থায় বায়ু বা গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎমোক্ষন হয় না। কিন্তু কয়েকটি বিশেষ উপায়ের মাধ্যমে গ্যাসের মধ্যে আয়ন ও অনুগুলির মাধ্যমে তড়িৎপরিবহন করানো যায়। কয়েকটি বিশেষ উপায় এখানে উল্লেখ করা হল।
(1) গ্যাসকে খুব উত্তপ্ত করলে তাপীয় আয়নীভবন ঘটে গ্যাস আয়নিত হয়।
(2) গ্যাসের মধ্য দিয়ে অতিক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অতিবেগুনী রশ্মি, এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি ইত্যাদি পাঠিয়ে গ্যাসকে আয়নিত করা হয়।
(3) গ্যাস বা বায়ুর মধ্য দিয়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত শক্তিশালী আলফা কণা, বিটা কণা পাঠিয়ে গ্যাসকে আয়নিত করা যায়।
(4) গ্যাসকে খুব নিম্নচাপে রেখে গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎমোক্ষনের ব্যবস্থা করে গ্যাসকে আয়নিত করা যায়।
তড়িৎমোক্ষন নল (Discharge Tube):
বায়ু বা গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎক্ষরণের জন্য একটি বিশেষ ধরণের কাঁচের তৈরি নল ব্যবহার করা হয়। এই নল প্রায় \(30cm\) দৈর্ঘ্য এবং \(4cm\) ব্যাসের একটি শক্ত কাঁচের নল। এই নলের দুই মুখই বন্ধ থাকে এবং ওই দুইমুখ দিয়ে দুটি ধাতব তড়িৎদ্বার প্রবেশ করানো থাকে। নলের গায়ে একটি ছিদ্রের মাধ্যমে একটি পার্শ্বনল লাগানো থাকে। এই পার্শ্বনলটি একটি বায়ু-নিষ্কাশন পাম্পের সাথে যুক্ত থাকে যার মাধ্যমে নলের ভিতরকার বায়ুকে বের করে দেওয়া যায়। নলের দুইপ্রান্তের দুটি তড়িৎদ্বার একটি্ উচ্চবিভব পার্থক্য (প্রায় \(10,000V\)) বিশিষ্ট আবেশকুন্ডলীর সাথে যোগ করা থাকে।
এখন তড়িৎমোক্ষন নলের পার্শ্বনলের সঙ্গে যুক্ত পাম্পের সাহায্যে নলের ভিতরকার গ্যাস ধীরে ধীরে কমাতে থাকলে নিম্নলিখিত ঘটনা গুলি দেখতে পাওয়া যায়।
(1) তড়িৎমোক্ষন নলের অভ্যন্তরের বায়ুর চাপ যখন প্রায় \(1cm\) বা (\(1\) টর) হয়, তখন এক তড়িৎদ্বার থেকে অপর তড়িৎদ্বারের দিকে বেগুনী রঙের লম্বা স্ফুলিঙ্গ এঁকে-বেঁকে অগ্রসর হয় এবং তড়িৎমোক্ষনের চটপটি ফাটার মতো শব্দ শোনা যায়।
(2) তড়িৎমোক্ষন নলের অভ্যন্তরের বায়ুর চাপ যখন প্রায় \(0.5cm\) বা (\(1\) টর) হয়, তখন তড়িৎমোক্ষনটি স্থায়ী হয়। এই নলের মধ্যে অবস্থিত বায়ুতে বেগুনী রঙের মোক্ষন ক্যাথোড ও অ্যানোডের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ করে। এই দীপ্তিমান আলোক স্তম্ভকে 'ধনাত্বক স্তম্ভ' (Positive column) বলা হয়। ক্যাথোডের খুব কাছের অঞ্চলে এই দীপ্তি দেখা যায় না। আলোকহীন এই অঞ্চলটিকে "ফ্যারাডের অন্ধকার অঞ্চল" (Faraday's dark region) বলে। ক্যাথোড সংলগ্ন খুব অল্প জায়গায় এক ধরনের হালকা নীলাভ দীপ্তি দেখা যায়। একে "ঋনাত্বক দীপ্তি" (Negative column) বলে। এই ঋনাত্বক দীপ্তি এবং ধনাত্বক স্তম্ভের মাঝখানে জায়গা জুড়ে থাকে "ফ্যারাডের অন্ধকার অঞ্চল"।
(3) এরপর নলের ভিতরকার বায়ুর চাপ আরো কমিয়ে প্রায় \(0.1cm\) করা হলে, ঋনাত্বক দীপ্তি ক্যাথোডের তল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অ্যানোডের দিকে সরে আসে, এবং ধনাত্বক স্তম্ভের নিরবচ্ছিন্ন পটি ভেঙে অনেকগুলি আলোকচক্রের সমষ্টিতে পরিনত হয়। এই আলোকচক্র গুলির ফাঁকে ফাঁকে অন্ধকার স্থান থাকে। এব এই অবস্থায় ক্যাথোডের উপর হালকা নীলাভ দীপ্তি দেখা যায়। এটি "ঋনাত্বক দীপ্তি"।
তড়িৎমোক্ষন (Electric discharge):
সাধারাণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাস তড়িতের অপরিবাহী। কিন্তু কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে বায়ু বা গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহ করার ঘটনাকে তড়িৎমোক্ষন বলে।
সাধারণ অবস্থায় বায়ু বা গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎমোক্ষন হয় না। কিন্তু কয়েকটি বিশেষ উপায়ের মাধ্যমে গ্যাসের মধ্যে আয়ন ও অনুগুলির মাধ্যমে তড়িৎপরিবহন করানো যায়। কয়েকটি বিশেষ উপায় এখানে উল্লেখ করা হল।
(1) গ্যাসকে খুব উত্তপ্ত করলে তাপীয় আয়নীভবন ঘটে গ্যাস আয়নিত হয়।
(2) গ্যাসের মধ্য দিয়ে অতিক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অতিবেগুনী রশ্মি, এক্স রশ্মি, গামা রশ্মি ইত্যাদি পাঠিয়ে গ্যাসকে আয়নিত করা হয়।
(3) গ্যাস বা বায়ুর মধ্য দিয়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত শক্তিশালী আলফা কণা, বিটা কণা পাঠিয়ে গ্যাসকে আয়নিত করা যায়।
(4) গ্যাসকে খুব নিম্নচাপে রেখে গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎমোক্ষনের ব্যবস্থা করে গ্যাসকে আয়নিত করা যায়।
তড়িৎমোক্ষন নল (Discharge Tube):
বায়ু বা গ্যাসের মধ্য দিয়ে তড়িৎক্ষরণের জন্য একটি বিশেষ ধরণের কাঁচের তৈরি নল ব্যবহার করা হয়। এই নল প্রায় \(30cm\) দৈর্ঘ্য এবং \(4cm\) ব্যাসের একটি শক্ত কাঁচের নল। এই নলের দুই মুখই বন্ধ থাকে এবং ওই দুইমুখ দিয়ে দুটি ধাতব তড়িৎদ্বার প্রবেশ করানো থাকে। নলের গায়ে একটি ছিদ্রের মাধ্যমে একটি পার্শ্বনল লাগানো থাকে। এই পার্শ্বনলটি একটি বায়ু-নিষ্কাশন পাম্পের সাথে যুক্ত থাকে যার মাধ্যমে নলের ভিতরকার বায়ুকে বের করে দেওয়া যায়। নলের দুইপ্রান্তের দুটি তড়িৎদ্বার একটি্ উচ্চবিভব পার্থক্য (প্রায় \(10,000V\)) বিশিষ্ট আবেশকুন্ডলীর সাথে যোগ করা থাকে।
এখন তড়িৎমোক্ষন নলের পার্শ্বনলের সঙ্গে যুক্ত পাম্পের সাহায্যে নলের ভিতরকার গ্যাস ধীরে ধীরে কমাতে থাকলে নিম্নলিখিত ঘটনা গুলি দেখতে পাওয়া যায়।
(1) তড়িৎমোক্ষন নলের অভ্যন্তরের বায়ুর চাপ যখন প্রায় \(1cm\) বা (\(1\) টর) হয়, তখন এক তড়িৎদ্বার থেকে অপর তড়িৎদ্বারের দিকে বেগুনী রঙের লম্বা স্ফুলিঙ্গ এঁকে-বেঁকে অগ্রসর হয় এবং তড়িৎমোক্ষনের চটপটি ফাটার মতো শব্দ শোনা যায়।
(2) তড়িৎমোক্ষন নলের অভ্যন্তরের বায়ুর চাপ যখন প্রায় \(0.5cm\) বা (\(1\) টর) হয়, তখন তড়িৎমোক্ষনটি স্থায়ী হয়। এই নলের মধ্যে অবস্থিত বায়ুতে বেগুনী রঙের মোক্ষন ক্যাথোড ও অ্যানোডের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ করে। এই দীপ্তিমান আলোক স্তম্ভকে 'ধনাত্বক স্তম্ভ' (Positive column) বলা হয়। ক্যাথোডের খুব কাছের অঞ্চলে এই দীপ্তি দেখা যায় না। আলোকহীন এই অঞ্চলটিকে "ফ্যারাডের অন্ধকার অঞ্চল" (Faraday's dark region) বলে। ক্যাথোড সংলগ্ন খুব অল্প জায়গায় এক ধরনের হালকা নীলাভ দীপ্তি দেখা যায়। একে "ঋনাত্বক দীপ্তি" (Negative column) বলে। এই ঋনাত্বক দীপ্তি এবং ধনাত্বক স্তম্ভের মাঝখানে জায়গা জুড়ে থাকে "ফ্যারাডের অন্ধকার অঞ্চল"।
(3) এরপর নলের ভিতরকার বায়ুর চাপ আরো কমিয়ে প্রায় \(0.1cm\) করা হলে, ঋনাত্বক দীপ্তি ক্যাথোডের তল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অ্যানোডের দিকে সরে আসে, এবং ধনাত্বক স্তম্ভের নিরবচ্ছিন্ন পটি ভেঙে অনেকগুলি আলোকচক্রের সমষ্টিতে পরিনত হয়। এই আলোকচক্র গুলির ফাঁকে ফাঁকে অন্ধকার স্থান থাকে। এব এই অবস্থায় ক্যাথোডের উপর হালকা নীলাভ দীপ্তি দেখা যায়। এটি "ঋনাত্বক দীপ্তি"।
(4) এরপর নলের বায়ুর চাপ আরো কমিয়ে প্রায় \(0.01cm\) করা হলে, আলোক চক্রগুলির মাঝের ফাঁক ক্রমশ বাড়ে। এই সময় ঋনাত্বক দীপ্তি ও ক্যাথোডের মাঝে আর একটি অন্ধকার অঞ্চল সৃষ্টি হয়। একে "ক্রুকসের অন্ধকার অঞ্চল" বলে। এই অবস্থায় ক্যাথোডের গায়ে আর একটি গোলাপী দীপ্তি দেখা যায়। একে "ক্যাথোড দীপ্তি" বলে।
(5) এখন গ্যাসের চাপ \(0.01cm\) অপেক্ষা আরও কম করা হলে ক্রুকস অঞ্চল ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে সমগ্র নলটিকে পূর্ণ করে। ফলে নলটি অন্ধকারাচ্ছন হয়ে যায়। এই সময় নলের মধ্যে তড়িৎমোক্ষন খুব কষ্টসাধ্য হয়।
ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এই সময় ক্যাথোড থেকে একপ্রকার দ্রুতগতির আহিত কণা নির্গত হয়ে অ্যানোডের উপরে এবং কাঁচনলের গায়ে আপতিত হয়। ফলে কাঁচনলের গা থেকে নীলাভ প্রতিপ্রভ বিকিরণ (Fluorescent radiation) নির্গত হয়। ক্যাথোড থেকে নির্গত এই আহিত কণাকে "ক্যাথোড রশ্মি" বলে।
(6) এখন নলের মধ্যকার গ্যাসের চাপ \(0.00001cm\) করা হলে এবং দুইপ্রান্তের বিভব পার্থক্য খুব বেশী হলে নলের মধ্যে গ্যাসের অণুর সংখ্যা অনেক কমে যাওয়ার জন্য গ্যাসের মধ্য দিয়ে আর তড়িৎ পরিবহন হয় না। একে নলের মোক্ষনহীন অবস্থা বলে।
গ্যাসের মধ্যে তড়িৎমোক্ষন ঘটনার ব্যবহারিক প্রয়োগ:
(i) নিয়ন সাইন: বড় বড় দোকানে নিয়ন সাইন দিয়ে রাত্রে বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞাপন অনুযায়ী কাচের সরু নলকে বাঁকিয়ে বিভিন্ন অক্ষর তৈরি করে তার দুইপ্রান্তে তড়িৎদ্বার ঢুকিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর নলটিকে বায়ুশূন্য করে \(0.5cm\) চাপে কোনও গ্যাস ঢুকিয়ে উচ্চবিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে "ধনাত্বক স্তম্ভ" সৃষ্টি করা হয়।
নিয়ন গ্যাস দ্বারা কাঁচনলটি ভর্তি করলে: লাল রঙ হয়
হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা কাঁচনলটি ভর্তি করলে: হলুদ রঙ হয়
সাধারণ বায়ু দ্বারা কাঁচনলটি ভর্তি করলে: গোলাপী রঙ হয়
হাইড্রোজেন গ্যাস দ্বারা কাঁচনলটি ভর্তি করলে: নীলাভ লাল রঙ হয়
কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস দ্বারা কাঁচনলটি ভর্তি করলে: নীলাভ সাদা রঙ হয়
(ii) সোডিয়াম ও পারদ বাষ্প: রাস্তা আলোকিত করার জন্য এবং বর্ণালী পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়।
(iii) ফ্লুওরেসেন্ট বাতি: এখানে আবদ্ধ তড়িৎমোক্ষন নলের অভ্যন্তরের দেওয়ালে বেরিয়াম অক্সাইডের প্রলেপ লাগানো থাকে ফলে তড়িৎমোক্ষনের সময় প্রচুর ইলেকট্রন নির্গত করে। এবার নলটিকে বায়ুশূন্য করে তার ভেতরে সামান্য আর্গন গ্যাস, নাইট্রোজেন গ্যাস ও পারদ বাষ্প রাখা থাকে। তড়িৎমোক্ষনে প্রথমে আর্গন ও নাইট্রোজেন গ্যাস বাতিটিকে সক্রিয় করে, পরে পারদ বাষ্পের মধ্য দিয়ে তড়িৎমোক্ষন হলে সাদা আলোর সৃষ্টি করে। এই জাতীয় বাতি বেশী আলো দেয়, ছায়া হয় না এবং উষ্ণতার সৃষ্টি করে না।
গ্যাসের চাপ (cm) | বিভিন্ন চাপে যা দেখা যায় |
---|---|
1 cm | তড়িৎদ্বার দুটির মধ্যে লম্বা স্ফুলিঙ্গ এঁকে বেঁকে যায়। এবং তড়িৎক্ষরণের শব্দ শোনা যায়। |
0.5 cm | ক্যাথোড থেকে অ্যানোড পর্যন্ত একটি বিস্তৃত আলোক স্তম্ভ সৃষ্টি হয়। একে ধনাত্বক স্তম্ভ বলে। এর বর্ণ বিভিন্ন গ্যাসে বিভিন্ন হয়। |
0.1 cm | অনেকগুলি আলোকচক্রের সৃষ্টি হয়। আলোক চক্রগুলির মাঝে মাঝে অন্ধকার অঞ্চল থাকে। এবং ক্যাথোডের উপর একটি নীলাভ-বেগুনী দীপ্তির সৃষ্টি হয়। একে ক্যাথোড দীপ্তি বলে। |
0.05 cm | নেগেটিভ দীপ্তি ও ক্যাথোডের মাঝে ক্রুকস কৃষ্ণাচল সৃষ্টি হয়। ক্যাথোডের উপর একটি গোলাপী দীপ্তি সৃষ্টি হয়। একে ক্যাথোড দীপ্তি বলে। |
0.01 cm | ক্রুকসের অন্ধকার অঞ্চল সমগ্র নলে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাথোডের বিপরীত দেওয়ালে প্রতিপ্রভার সৃষ্টি হয়। এবং ঋনাত্বক আধানের একধরণের কণিকা প্রবাহ ঘটতে থাকে। একে ক্যাথোড রশ্মি বলে। |
0.001 cm | তড়িৎমোক্ষন নলের অভ্যন্তরে গ্যাসের অণুগুলি খুবই কমে যাওয়ায় আর তড়িৎপ্রবাহ হয় না। |
No comments:
Post a Comment